আগামী লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসই হবে নির্ণায়ক শক্তি। পালা করে প্রায় প্রতিটি নির্বাচনী জনসভাতেই এমনটাই দাবি করে আসছেন দলের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই লক্ষ্যমাত্রা নিয়েই তৃণমূল সুপ্রিমো পশ্চিমবঙ্গের বাইরেও প্রার্থী দিয়েছেন। আর এখানেই উঠেছে প্রশ্ন। রাজনৈতিক মহলের ধারণা পশ্চিমবঙ্গের বাইরে তৃণমূল যে হারে প্রার্থী দাঁড় করিয়েছে তাতে বড়সড় ধাক্কা খেতে পারে তারা।
আগামীদিনে জাতীয় রাজনীতিতে দলের বর্তমান অবস্থানকে কতটা ধরে রাখতে পারবেন তা নিয়ে কিন্তু সংশয় রয়েই গেছে। কারণ এবারের নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস যে পরিমাণ প্রার্থী পশ্চিমবঙ্গের বাইরে দাঁড় করিয়েছেন তাতে দেখা গেছে, এমন বহু কেন্দ্র রয়েছে যেখানে দলের অস্তিত্ব শূন্যের কোঠায়। এমনকি নেই পার্টি অফিসও। এমন অবস্থায় দল কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে তা নিয়ে ইতোমধ্যেই নানা মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যে জায়গায় পশ্চিমবঙ্গের ৪২টি আসনের মধ্যে দল দুই অংকে পৌঁছতে সক্ষম হলেও ৩০-৩২টি আসন পেতেই যেখানে অনেক ঘাম ঝড়াতে হবে, সেখানে বাইরের রাজ্যে প্রার্থী দাঁড় করিয়ে জয় ছিনিয়ে আনা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াবে।
পশ্চিমবঙ্গে এবার বাম বিরোধী ভোট তিনভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে। কংগ্রেস, তৃণমূল এবং বিজেপি। বিশেষজ্ঞ মহলের ধারণা, এ রাজ্যে কংগ্রেসের কমিটেড ভোটে তেমন ভাঙন ধরানো সম্ভব নয়, অন্যদিকে ধর্ষণ, চিটফান্ডসহ কয়েকটি ঘটনায় রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছে। এমতাবস্থায় দেশজুড়ে যেভাবে মোদি হাওয়া বইতে শুরু করেছে তাতে তৃণমূল-বামবিরোধী বেশ কিছু ভোট বিজেপির ঝুলিতে পড়তে পারে। স্বভাবতই সিঁদুরে মেঘ দেখছে তৃণমূল।
তার ওপরে তৃণমূল সুপ্রিমো এবার ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন। মণিপুর, ত্রিপুরা, আসমসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের যে রাজ্যগুলোতে তৃণমূল তাদের প্রার্থী দিয়েছে সেখানেও দলের জয় কতটা সুনিশ্চিত হবে তা নিয়ে রীতিমতো সন্দিহান দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারাই।
অন্যদিকে হিন্দি বলয়ে তৃণমূলের আত্মপ্রকাশ ঘটাবেন বলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে ধারণা নিয়েছিলেন দিল্লির রামলীলা ময়দানে মমতা-আন্নার যৌথসভা ‘ফ্লপ’ হওয়ায় এককথায় তাও ভেস্তে গেছে। এমনকি অনেক ভিন রাজ্যের প্রচার সভাতে যাওয়াই বন্ধ করে দিয়েছেন মমতা। ফলে মনোবল হারিয়েছেন হিন্দি বলয়ের বিভিন্ন কেন্দ্রে দাঁড়ানো সেই সব তৃণমূল প্রার্থী। সব মিলিয়ে অনেক প্রার্থীরই এখন ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা। পশ্চিমবঙ্গসহ সারা দেশে ১০০টির বেশি আসনে প্রার্থী দিয়েছেন মমতা। এর মধ্যে উত্তর প্রদেশেই ১৯ আসনে লড়ছে তৃণমূল। কেরলে ১০টি আসন, ঝাড়খণ্ডে ৮টি, দিল্লিতে ৫টি ছাড়াও বিহার, ছত্রিশগড়ে প্রার্থী দিয়েছে দল। দেখা গেছে, এমন বহু রাজ্য আছে যেখানে তৃণমূল কংগ্রেসের নাম পর্যন্ত শোনেনি কেউ। সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে তৃণমূল নতুন সরকার গড়তে আদৌ নির্ণায়ক শক্তি হয়ে দাঁড়াবে তা বলবে সময়।