ক্রিমিয়ায় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা এবং ইউক্রেইন সীমান্তে প্রায় ৪০ হাজার সেনা মোতায়েন করে পশ্চিমা বিশ্বকে উদ্বিগ্ন করে তোলা রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন আরো দেশ জয় না করে থামবেন না বলে জানিয়েছেন তার সাবেক এক ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টা। পুতিনের সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ইন্দ্রেজ ইলারিওনোভের বরাত দিয়ে রোববার ব্রিটেনের দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট পত্রিকা বলেছে, ইউক্রেইনের ক্রিমিয়ার পর পুতিন বেলারুশ, বাল্টিক স্টেইটস (লিথুনিয়া, এস্তোনিয়া, লাটভিয়া) ও ফিনল্যান্ডকে রাশিয়ান ফেডারেশনে ফিরিয়ে আনতে চান। পুতিনের কাছে এ উদ্যোগটি রুশ জার সাম্রাজ্যের সর্বশেষ শাসক দ্বিতীয় নিকোলাস ও স্টালিনের শাসনাধীন সোভিয়েত ইউনিয়নভুক্ত এলাকাগুলো উদ্ধার করে ঐতিহাসিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা। ইলারিওনোভ ২০০০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত পুতিনের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ছিলেন। সম্প্রতি একটি সুইডিশ পত্রিকা স্যানেস্কা ডগব¬ডাটকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি পুতিনের পররাষ্ট্রনীতি সম্পর্কে যুক্তি তুলে ধরেন। ইলারিওনোভ বলেন, রাশিয়া মনে করে ১৯১৭ সালে ফিনল্যান্ডকে স্বাধীনতা মঞ্জুর করাটা ছিল জাতীয় স্বার্থের বিরুদ্ধে প্রতারণা। আর পুতিনের ভাবনা হল, তার ও তার পূর্বসূরিদের জিনিসই তিনি রক্ষা করছেন। পুতিন জর্জিয়ার কিছু অংশ, ইউক্রেইন, বেলারুশ, বাল্টিক স্টেইটস এবং ফিনল্যান্ডকে রুশ ফেডারেশনের অধীন পাওয়ার চেষ্টায় আছেন। সুইডিশ ওই দৈনিককে ইলারিওনাভ আরো বলেন, পশ্চিমা নেতাদের কথাবার্তা শুনে মনে হয়, অপর একটি দেশ জয় করতে চাওয়ার মতো নেতাও যে বিশ্বে রয়েছে তারা তা বেমালুম ভুলে বসে আছে। ফিনল্যান্ড নেটো সদস্যভুক্ত দেশ না হওয়া সেখানে রাশিয়া হামলা চালালে শক্তিধর এই সামরিক জোটের কিছুই করার থাকবে না। ফিনল্যান্ডও সম্প্রতি বাল্টিক সাগর অঞ্চলে তাদের তৎপরতা বাড়িয়েছে বলে দেশটির বিমান বাহিনী জানিয়েছে। স্ক্যান্ডিনভিয়ানরা ১০৮ বছর ধরে রুশ সাম্রাজ্যের অধীনে সায়ত্ত্বশাসিত অঞ্চল হিসেবে ছিল। পুতিন সেখানেও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবেন কিনা প্রশ্ন করা হলে ইলারিওনাভ বলেন, পুতিন এমন কিছু ভাবছেন না। তবে পুতিনকে থামানো না হলে বিষয়টি আজ হোক কিংবা কাল সামনে আসবেই। পুতিন অনেকবারই বলেছেন, বলশেভিক ও কম্যুনিস্ট নেতারা বড় ধরনের ভুল করেছে। তিনি বলতে চাইছেন, বলশেভিক নেতারা ১৯১৭ সালে ফিনল্যান্ডের স্বাধীনতা দিয়ে রাশিয়ার জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। ইউক্রেইন সীমান্তে সেনা মোতায়েন এবং ক্রিমিয়াকে মস্কোর অধীনে আনার পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক অবরোধ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এছাড়া, রাশিয়ার শীর্ষ রাজনীতিক ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞাও দিয়েছে পশ্চিমা দেশগুলো। রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী পদক্ষেপ কিভাবে রুখে দেয়া যায়- এ প্রশ্নে পুতিনের সাবেক এ উপদেষ্টা বলেন, অবরোধ পুতিনকে কোণঠাসা করার পরিবর্তে বরং তার জন্য আরো সহায়ক হয়েছে। কারণ, এতে করে বিশ্ব সম্পর্কে পুতিনের দৃষ্টিভঙ্গি এবং ক্রেমলিনের প্রচার-প্রপাগান্ডা সুদৃঢ় ও বেগবান হয়েছে।
তাতার মুসলমানদের পুনর্বাসনের আশ্বাস পুতিনের
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন ক্রিমিয়ার মুসলিম জনগোষ্ঠী তাতাদের পুনর্বাসনের বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন। সাবেক সোভিয়েত নেতা স্টালিন ক্রিমিয়ার তাতার মুসলমানদের সঙ্গে যে অন্যায় আচরণ করেছিলেন পুতিনের এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়িত হলে তার অবসান হতে পারে বলে পর্যবেক্ষকরা ধারণা করছেন। রাশিয়ার ভলগা অঞ্চলের তাতারস্তান প্রজাতন্ত্রের প্রেসিডেন্ট রুস্তম মিন্নিখানোভ গত মঙ্গলবার মস্কোয় রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে পুতিন ওই আশ্বাস দেন। ভৌগোলিকভাবে ক্রিমিয়া থেকে তাতারস্তানের দূরত্ব কয়েক হাজার কিলোমিটার হলেও জাতিগতভাবে দুই তাতার জনগোষ্ঠীর ব্যাপক মিল রয়েছে। সম্প্রতি ক্রিমিয়ায় অনুষ্ঠিত গণভোটের জের ধরে প্রজাতন্ত্রটি রাশিয়ায় যোগ দেয়ার পর ক্রিমিয়া সফর করেছেন মিন্নিখানোভ। পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাতে তিনি ক্রিমিয়ার তাতার জনগোষ্ঠীকে অবদমিত জনগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার অনুরোধ জানান। ১৯৯০-এর দশকের এক রুশ আইন অনুযায়ী সে দেশের অবদমিত বা নির্যাতিত জনগোষ্ঠী পুনর্বাসনের সুযোগ পায়। পুতিনকে তাতারস্তানের প্রেসিডেন্ট বলেন, ক্রিমিয়ার তাতারদের ১৯৯১ সালের আইনের আওতায় আনলে খুব ভালো হয়। এটি করলে তা হবে তাতারদের জন্য মস্তবড় নৈতিক সমর্থন। এ প্রস্তাবের জবাবে পুতিন বলেন, তিনি এটি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করার পাশাপাশি ক্রিমিয়ার তাতার নেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। তাতারস্তানের প্রেসিডেন্ট মিন্নিখানোভ এবং তার পূর্বসুরি মিনতিমের শাইমিয়েভ ক্রিমিয়ার তাতার জনগোষ্ঠীর অধিকার আদায়ের জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করে আসছেন। সূত্র : আইআরআইবি ও ওয়েবসাইট।