দৈনিক বার্তা

দৈনিক বার্তা- যুদ্ধবিধ্বস্ত, পিছিয়ে পড়া দেশগুলোতে মেয়েদের অবস্থা, শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে বরাবরই এগিয়ে আসতে দেখা গিয়েছে তাঁকে। আফগানিস্তানে মেয়েদের স্কুল তৈরি করেছেন। গিয়েছিলেন সিরিয়াতেও। এ বার তিনি মুখ খুললেন যুদ্ধের সময় মেয়েদের উপর চলা নৃশংস যৌন হেনস্থা নিয়ে। আগামী ১০ জুন ১৪১টি দেশকে নিয়ে একটি সম্মেলনের ডাক দিলেন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি। চার দিন ব্যাপী সম্মেলন বসবে লন্ডনে। আলোচনার বিষয় মূলত যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলোতে কী ভাবে মেয়েদের উপর যৌন অত্যাচার, ধর্ষণকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। আর তার পর তা ধামাচাপা পড়ে যায়। যুদ্ধ, হত্যার কথাই উঠে আসে সংবাদপত্রের শিরোনামে। যৌন অত্যাচারের কোনও তদন্ত হয় না। অপরাধীরা মাথা তুলে ঘুরে বেড়ায় প্রকাশ্যে।  হলিউড অভিনেত্রী জানালেন, সম্মেলনের সঞ্চালনা করবেন তিনি নিজে। বললেন, “কড়া পদক্ষেপ করা হবে। যাতে ভবিষ্যতে যখন কোনও দেশে যুদ্ধ লাগবে, কোনও ব্যক্তি ধর্ষণ করার আগে ঘটনার পরিণতি কত ভয়ানক হতে পারে, সে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকবেন। আর এক জন মহিলাও তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে নিশ্চিন্ত থাকবেন। জানবেন কেউ তাঁর ক্ষতি করতে পারবে না। যদি তেমন কিছু হয়… অপরাধী যথেষ্ট শাস্তি পাবে।”

বিশ্ব শান্তি প্রক্রিয়ার এক সফরে গত সপ্তাহে ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রী উইলিয়াম হেগের সঙ্গে বসনিয়া-হার্জেগোভিনা যান অ্যাঞ্জেলিনা। দেশটার এক পাশে ক্রোয়েশিয়া। আর এক পাশে সার্বিয়া। ১৯৯৫ সালে সার্বিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে এই বসনিয়ার স্রেব্রেনিকায় গণহত্যা হয় ৮০০০ পুরুষ ও নাবালকের। কিন্তু ধামাচাপা পড়ে যায়, কী ভাবে হাজার হাজার মহিলার ধর্ষণ করে সেনা। ‘স্রেব্রেনিকা ম্যাসাকার’ নামে কুখ্যাত ইতিহাসের ওই অধ্যায়। কিন্তু কোথাও মেয়েদের করুণ পরিণতির কথা উল্লেখ নেই। এই স্রেব্রেনিকার মেয়েদের সঙ্গেই কথা বললেন অ্যাঞ্জেলিনা। বৈঠক বসেছিল পরিত্যক্ত একটা কারখানায়। এই কারখানাতেই ’৯৫-এর জুলাই মাসে আশ্রয় নিয়েছিলেন কয়েক হাজার লোক। রাষ্ট্রপুঞ্জের ওলন্দাজ দূতদের কাছে নিরাপত্তা ভিক্ষা চান তাঁরা। কিন্তু সার্বিয়ার সেনার হাত থেকে রক্ষা করতে পারেনি ওলন্দাজরা। এখন সেখানে বিশাল পাথরে খোদাই করা ৮০০০ ছেলে-বুড়োর নাম।  কিন্তু ওই পর্যন্তই। মেয়েদের কথা কোথাও লেখা নেই। অ্যাঞ্জেলিনাকে সামনে পেয়ে নিজেদের কথা উজাড় করে জানালেন স্রেব্রেনিকার মেয়েরা। এমনই এক মহিলা এডিনা। সার্বিয়ার সেনারা তাঁকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল এক খনি এলাকায়। “ওঁরা বহু বার ধর্ষণ করে আমাকে। আরও দু’টো মেয়ের উপর অত্যাচার চলছিল পাশেই। তার পর আমাদের একটা পরিত্যক্ত বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। আট দিন বন্দি ছিলাম। আর সেই সঙ্গে চলে টানা অত্যাচার”, বললেন এডিনা। তাঁর কথায়, “যখন এ সব চলছিল, আমি যেন আমার শরীরে ছিলাম না। বাইরে থেকে নিজের ক্ষতবিক্ষত দেহটা দেখতে পেতাম।” এডিনার ধর্ষকদের কোনও সাজা হয়নি। তাদের তিন জনকে দেখলে এখনও চিনতে পারবেন, জানালেন মহিলা। কয়েক মাইল দূরে একটা শহরে থাকে তারা, এডিনা জানেন। বললেন, ওরা ফেসবুকেও আছে। ২০,০০০ মেয়ে বসনিয়ায় ধর্ষিতা হয়েছিল সে বছর। গত দু’দশকে কঙ্গোয় ২ লক্ষেরও বেশি তরুণী নির্যাতিতা হয়েছেন। ’৯৪ সালে আফ্রিকার রোয়ান্ডায় ধর্ষিতার সংখ্যা ছোঁয় ৫ লাখ। এ মুহূর্তে যেমন সিরিয়ায় প্রতি দিন ধর্ষিতা হচ্ছেন বহু মহিলা।

অ্যাঞ্জেলিনা জানালেন, এডিনার মতো সবাই হয়তো এগিয়ে এসে এত স্পষ্ট ভাবে নিজের ধর্ষণের প্রতিবাদ করবেন না। কিন্তু কোথাও একটা এর শেষ হওয়া প্রয়োজন। সে প্রসঙ্গে এডিনা বললেন, “ওরা লজ্জা পাবে। আমার লজ্জা পাওয়ার তো কোনও কারণ নেই!”