চট্টগ্রাম, ১ মার্চ ২০১৪ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২০১৫ সাল নাগাদ দু’টি সাবমেরিন সংযোজন করা হবে। তিনি বলেন, ‘বর্তমান সরকারের দৃঢ় প্রত্যয় ও প্রতিশ্রুতির ফলস্বরূপ বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনীতে পরিণত করার জন্য ইতোমধ্যে দুটি সাবমেরিন সংযোজনের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে, যা ২০১৫’র শেষ নাগাদ নৌবাহিনীতে সংযোজিত হবে’। এছাড়া উপকূলীয় জেলা পটুখালীর রাবনাবাদ এলাকায় দেশের বৃহত্তম নৌ ঘাঁটি প্রতিষ্ঠার কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে নৌবাহিনীর ঘাঁটি ইসা খাঁ’য় চীন থেকে ক্রয় করা দুটি ০৫৩এইচ২ ফ্রিগেড বানৌজ আবুবকর ও বানৌজ আলী হায়দার-এর কমিশনিং অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন। তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে দুটি জাহাজের নাম ফলক উন্মোচন করেন। যুদ্ধবহর বৃদ্ধির পাশাপাশি নৌবাহিনীর নিজস্ব বিমান ঘাঁটিসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো বৃদ্ধির পদক্ষেপ আওয়ামী লীগ সরকারের সময়েই শুরু হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌবাহিনীতে আগত সাবমেরিনের জন্য সাবমেরিন ঘাঁটি এবং অবকাঠামো গঠনের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণের পাশাপাশি দেশকে সমৃদ্ধশালী করার জন্য নৌবাহিনীকে সার্বিকভাবে অত্যাধুনিক ও শক্তিশালী করে গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যাক্ত করেন। তিনি আশা প্রকাশ করেন, আমাদের নৌবাহিনী শুধু দেশের নয়, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের যেকোন স্থানে ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বি এন এস নৌঘাটিঁতে এসে পৌছলে নৌবাহিনী প্রধান ভাইস এডমিরাল এম ফরিদ হাবিব এবং চট্রগ্রম নেভাল জোনের কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল এম আখতার হামিদ তাঁকে স্বাগত জানান। কমিশনিং অনুষ্ঠানে মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব:) তারেক আহমেদ সিদ্দিক, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল এনামুল বারি, কূটনীতিক এবং সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌবাহিনী এবং কোস্টগার্ডের সদস্যরা প্রতিনিয়ত লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকে অনেক প্রাকৃতিক প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে দেশের সমুদ্র এলাকার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা বিধান করছে। তাই অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও একটি দক্ষ, আধুনিক ও ভারসাম্যপূর্ণ ‘ত্রিমাত্রিক নৌবাহিনী’র প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
তিনি বলেন, নৌবাহিনীকে একটি কার্যকর বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ইতোমধ্যে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে, যা ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। সরকার ২০১০ সাল থেকে লেবাননে জাতিসংঘ মিশনে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ ওসমান ও মধুমতি মোতায়েন করেছে। দক্ষতার সাথে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালন করে তারা দেশের জন্য সুনাম অর্জন করেছে।
এ বছরেই মালিতে ১৩৩ জনের একটি নৌ কন্টিনজেন্ট মোতায়েন করা হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চসংখ্যক মোট ১২টি জাহাজ বর্তমান সরকারের আমলে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে সংযুক্ত হয়েছে। সংযুক্ত দু’টি মেরিটাইম হেলিকপ্টার ও দুটি মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট সংযোজনের মাধ্যমে বাংলাদেশ নৌবাহিনী একটি নতুন যূগে পদার্পণ করেছে। দেশের বিশাল সমুদ্র এলাকায় টহল এবং পর্যবেক্ষণের সক্ষমতা বহুগুণে বেড়ে গেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংযুক্ত দু’টি মেরিটাইম হেলিকপ্টার ও দুটি মেরিটাইম পেট্রোল এয়ারক্রাফট আমাদের সমুদ্রসীমা এবং সমুদ্র সম্পদ রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তিনি বলেন, একটি শক্তিশালী নৌবহর গঠনের উদ্দেশ্যে অত্যাধুনিক দুটি করভেট চীনে নির্মাণাধীন রয়েছে, যা ২০১৫ সালে নৌবহরে সংযোজিত হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ভৌগোলিক অবস্থান এবং কৌশলগত কারণে বাংলাদেশের জলসীমা ও এর সম্পদ রক্ষায় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ভূমিকার গুরুত্ব উপলব্ধি করেই জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীন বাংলাদেশে একটি আধুনিক নৌবাহিনী গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছিলেন। বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা থাকা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর আন্তরিক প্রচেষ্টায় ভারত থেকে দুটি পেট্রোল ক্রাফট পদ্মা ও পলাশ নিয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যাত্রা শুরু হয়।
বাসস