হঠাত্ করেই ব্যাপক তত্পরতা শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক৷ সরকারি দলের প্রভাবশালী নেতা থেকে শুরু করে সরকারি কর্মকর্তাদেরও ডেকে পাঠানো হচ্ছে দুদকে৷ বলা বাহুল্য, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগেই ডাকা হচ্ছে তাঁদের৷দুদক-এর এসব তত্পরতার ব্যাপারে কমিশনার শাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, এই সরকার, এর আগের সরকার এবং তার আগেও যারা সরকার বা বিরোধী দলে ছিলেন – সকলেরই দুর্নীতি খতিয়ে দেখা হবে৷ তাঁর মতে, ‘‘শুধু যে এই সরকার দুর্নীতি করছে তা নয়৷ এর আগে যাঁরা ছিলেন তাঁরা এবং তার আগেও যাঁরা ক্ষমতায় ছিলেন তাঁরাও দুর্নীতি করেছেন৷ সেই দুর্নীতিগুলো এখনো মরে যায়নি৷ তাই আমরা সরকার ও বিরোধী দল সকলের দুর্নীতিই খতিয়ে দেখবো৷” তিনি বলেন, দুদক যে কাজ শুরু করেছে শিগগিরই দেশবাসী তার রেজাল্ট দেখতে পাবে৷
অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বৃহস্পতিবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে সাবেক গৃহায়ন ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান খান ও রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী নুরুল হুদাকে৷ এর আগেও বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে দুদক৷ দুদক-এর জিজ্ঞাসাবাদের পর আবদুল মান্নান খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমি কোনো দুর্নীতি করিনি৷ তাই আমি একটা কথাই বলি যে, সত্যের মতো শক্তিশালী কোনো কিছু আর নাই৷ সত্য একদিন আপন মহিমায় উদ্ভাসিত হবেই৷” দুদক-এর উপ-পরিচালক ও অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন৷ সাবেক এই প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘‘দেশের মানুষ জানে যে আমি কতটা স্বচ্ছ৷ আমি বিগত পাঁচ বছরে ইতিবাচক কাজ করেছি৷ নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি৷ মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি দু’বার আহত হয়েছি৷” দুদক-এর কাছে কি বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘দুদক আমার কাছে যা জানতে চেয়েছে, আমি তার উত্তর দিয়েছি৷”
প্রসঙ্গত সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ, গত পাঁচ বছর আগে তাঁর সাকুল্যে ১০ লাখ ৩৩ হাজার টাকার সম্পত্তি ছিল৷ মন্ত্রিত্বকালে, অর্থাৎ গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে সেটা হয়েছে ১১ কোটি ৩ লাখ টাকা৷ আগে তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা৷ সেই আয় এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে বছরে ৩ কোটি ২৮ লাখ টাকায়৷ এছাড়া পাঁচ বছরের মন্ত্রিত্বকালে তাঁর সম্পত্তি ১০৭ গুণ বেড়েছে৷
এদিকে নিজের হাত দিয়ে কোনো দুর্নীতি হয়নি বলে খোলাখুলি ‘চ্যালেঞ্জ’ ছুড়ে দিয়েছেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বা রাজউক-এর চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল হুদা৷ বৃহস্পতিবার দুদক-এর জিজ্ঞাসাবাদের পর তিনি বলেন, ‘‘একজন ভিআইপি-র দুর্নীতি অনুসন্ধানে কিছু তথ্য-উপাত্ত চেয়ে পাঠিয়েছিল দুদক৷ তাই আমি আমার বক্তব্য উপস্থাপন করতে এসেছি৷ তবে আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ নেই৷ আমার হাত দিয়ে রাজউক-এর কোনো দুর্নীতি হয়নি৷ এটা আমার ওপেন চ্যালেঞ্জ৷”
এই দু’জনকে জিজ্ঞাসাবাদের পর কমিশনার শাহাবুদ্দিন চুপ্পু বলেন, ‘‘তাঁরা আসলে অনেক আত্মবিশ্বাস নিয়ে কথা বলেছেন৷ কেননা তাঁদের আত্মবিশ্বাস নিয়েই দুদক-এ আসতে হবে৷ তবে তাঁদের আত্মবিশ্বাস কতটা সত্য, তা আমাদের অনুসন্ধানে বের হবে৷”
দুদক-এর এ সব তত্পরতার ব্যাপারে টান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি-র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘‘দুদক যে তত্পরতা শুরু করেছে তাতে অবশ্যই তাদের ধন্যবাদ দিতে হবে৷ তারা সাহস করে ক্ষমতাধরদের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধানে নেমেছে৷ এখন দেখার বিষয় তাদের এ সব তদন্তে কি ফল আসে৷ মানুষ তাদের তদন্তের ফল দেখতে চায়৷ ক্ষমতাধরদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হওয়ায় মানুষের মধ্যে এক ধরনের প্রত্যাশার সৃষ্টি হয়েছে৷ এটা যেন কোনোভাবেই ধ্বংস না হয়৷ দুদক এবার সঠিক তদন্ত করে ক্ষমতাধরদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারলে দুদক-এর প্রতি মানুষের যে নেতিবাচক ধারণার তৈরি হয়েছে, তা অনেকটাই দূর হবে৷”