বাংলাদেশ ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক ওডিআই ম্যাচের পথচলা শুরু ১৯৮৬ সালে । ২০১৪ পর্যন্ত ২৭৭টি ওডিআই খেলতে গিয়ে বহু পথ পাড়ি দিয়েছে এদেশের ক্রিকেটাররা। যার মধ্যে রয়েছে বহু মিষ্টি মধুর স্মৃতি। কিন্তু হাতেগোনা কয়েকটি স্মৃতি আছে যা হৃদয়ে কাটার মতো আটকে আছে। ক্রীড়া সাংবাদিকতার কারণে বাংলাদেশ ক্রিকেটের বহু মধুর স্মৃতির সাক্ষী হবার সৌভাগ্য হয়েছে। ১৭ ফেব্রুয়ারি লঙ্কার বিপক্ষে সহজ ম্যাচ যেভাবে ১৩ রানে মুশফিকরা হেরেছে সেটা হাতেগোনা কষ্টকর স্মৃতি ভোলার নয়। বৃহস্পতিবার মুশফিকরা জয়ের প্রত্যাশার পতাকা উড়িয়ে আবার মিরপুরের উইকেটে নামবে। অধরা জয় কি হাতের মুঠোয় ধরা দেবে!
কাল হেরে গেলেই ২-০ ব্যবধানে সিরিজে হার। আর যদি “জয়” সম্ভব হয় তাহলে ১-১ হতে পারে। তাতে দুই দলের সামনেই একটি সুযোগ থাকছে সিরিজ জেতার জন্য। কিন্ত চট্টগ্রামে টি২০ সিরিজে আর ওডিআই প্রথম ম্যাচে যা দেখিয়েছে মুশফিকরা তাতে জয়ের প্রত্যাশা না করাই ভালো। লঙ্কানদের বিপক্ষে ৩৪টি ওডিআইি শেষ করার পর পরিসংখ্যানটা সেটাই ইঙ্গিত করে।
এ পর্যন্ত লঙ্কার বিপক্ষে সহজ জয়ের সুযোগ পেয়েও হেরেছে এ নিয়ে দুই বার। আর টেস্টে ২০০৩ সালে পাকিস্তানের মাটিতে মুলতানে উইকেটকিপার রশিদ লতিফের চিটারির কারণে বাংলাদেশ সেদিন প্রথম টেস্ট জেতা থেকে বঞ্চিত হয়েছিল। আর ওডিআই ম্যাচে ২০০৯ সালে নিশ্চিত জয় হাতছাড়া করেছিল বাংলাদেশ লঙ্কার বিপক্ষে প্রথম বার। মুলতানের হারটা ছিল প্রতিপক্ষের চালাকির কারণে। কিন্তু এতো বছর ক্রিকেট খেলে কেন এভাবে আউট হবে স্বীকৃত ব্যাটসম্যানরা! মিরপুরে ১৭ ফেব্রুয়ারি লঙ্কানদের ১৮০ রানে অলআউট করেও পারেনি মুশফিকরা! ১৮১ রানের টার্গেটে ৩ উইকেটে ১১৪ রান। বাকি ছিলেন সাকিব, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহ, নাসির ও সোহাগ গাজীর মতো স্বীকৃত ব্যাটসম্যানরা। বাকি ৭ উইকেটে কেন ৬৭ রান স্কোর বোর্ডে জমা হলো না? অথচ লঙ্কান কোচ বলছেন,বাংলাদেশ কঠিন প্রতিপক্ষ। একবার জেতা শুরু করলে আটকানো অসম্ভব। কিন্তু কোচের ভাষায় “একটা জয়” কবে আসবে এদেশের ক্রিকেটে!
লঙ্কানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের এই চারটি জয়ের মাঝে একটি স্মৃতি আছে কখনো ভুলে যাবার নয়। ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৪’র মতো ১৬ জানুয়ারি ২০০৯ সালে মিরপুর স্টেডিয়ামে এমনই একটি ঘটনা ঘটেছিল। সেদিন বোলারদের কারণে হেরেছিল বাংলাদেশ। টস হেরে বাংলাদেশ ১৫২ রানে অলআউট ৪৯.৪ ওভারে। আর লঙ্কানরা ৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা। সেই দিনও বাংলাদেশ জয়ের স্বপ্ন দেখে শেষ অবদি বুকভরা কষ্ট নিয়ে ঘরে ফিরেছিল। ৬ উইকেটে লঙ্কানরা ৬ রান থেকে স্কোর নিয়ে যায় ৫১ রানে। আর ৭ম উইকেট নিয়ে যায় ১১৪ রানে এবং ১১৪ রানেই ৮ম উইকেটের পতন ঘটে। এরপর আর পারেনি বাংলাদেশের বোলাররা। ৮ম উইকেটে জয় তুলে নেয় লঙ্কানরা। সেদিন স্পিনার মুরালি ৩৩ রান করেন ৮ম ব্যাটসম্যান হিসেবে। লোয়ার অর্ডারের ব্যাটসম্যানকে ফেরাতে পারেনি বাংলাদেশী বোলাররা। জয়টা সে কারণেই পেয়েছে লঙ্কানরা। যা পারেনি ১৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের স্বীকৃত (!) ব্যাটসম্যান মুশফিক, সাকিব, মাহমুদুল্লাহ ও নাসির।
১৯৮৬ সালে জনপ্লেয়ার গোল্ডলিফ ট্রফিতে লঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশ প্রথম ওডিআই খেলে। এরপর ২১ বছর অপেক্ষা করতে হয় লঙ্কানদের বিপক্ষে ওডিআই জয় করতে। ২০০৬ সালে বগুড়া শহীদ চান্দু স্টেডিয়ামে আসে সেই অধরা জয় ৪ উইকেটে। এরপর ৩ বছর পর মিরপুর স্টেডিয়ামে বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচে ৫ উইকেটের জয়। আর ৪ বছর পর ২০১২ সালে আবারো জয় ৫ উইকেটে এবং আবারও বৃষ্টিবিঘ্নিত ম্যাচ। আর ২০১৩ সালে পাল্লেকেলেতে লঙ্কার মাটিতে প্রথম ওডিআই জয় ৩ উইকেটে এবং অবধারিতভাবেই ম্যাচ বিঘ্নিত।