বঙ্গোপসাগরের মধ্যে একটি ছোট্ট দ্বীপ। দ্বীপটি বাংলাদেশের দখলে। শত্রুপক্ষ এই দ্বীপটি দখলে নিতে চায়। দ্বীপ দখলের জন্য হামলা চালাতে প্রস্তুত শত্রুপক্ষ। প্রস্তুত বাংলাদেশ নৌ বাহিনীও। উভয়পক্ষে চলছে টান টান উত্তেজনা। এর মধ্যে নৌ বাহিনী বাংলাদেশের তৈরি একটি ড্রোন বিমান (রিমোট কন্ট্রোলের সাহায্যে পরিচালিত এই বিশেষ বিমানে রয়েছে অত্যাধুনিক ভিডিও ক্যামেরা) আকাশে ওড়ায়। ড্রোনের ভেতরে থাকা ক্যামেরার সাহায্যে পাওয়া গেল শত্রুর অবস্থান। এদিকে শত্রুপক্ষ পাঠায় আরেকটি ড্রোন। ড্রোনটি নৌ বাহিনীর যুদ্ধ জাহাজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে ছোঁড়া হল মিসাইল। মুহূর্তেই ধ্বংস হয়ে গেল সেটি। এভাবেই শুরু হল নৌ বাহিনীর সঙ্গে শত্রুপক্ষের যুদ্ধ। নানা সমরাস্ত্রের ব্যবহারে শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে জয়ী হল বাংলাদেশ নৌ বাহিনী। রক্ষা করা গেল দ্বীপটি। না এটি কোন আসল যুদ্ধ নয়, নৌ বাহিনীর বাত্সরিক সমুদ্র মহড়ার চিত্র এটি। গতকাল সোমবার গভীর বঙ্গোপসাগরে চালানো হয় এই মহড়া। নানা কারণেই সমুদ্র এখন খুব গুরুত্বপূর্ণ। সমুদ্রের নিচে লুকিয়ে থাকা অঢেল সম্পদ, অর্থনৈতিক আর আন্তর্জাতিক রাজনীতির কারণে বঙ্গোপসাগর এখন অনেকের টার্গেট। মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র সীমানা মামলায় জয়ী হয়ে সমুদ্রের বিশাল এলাকার নিয়ন্ত্রণ পায় বাংলাদেশ। আর এই বিশাল এলাকার নিরাপত্তায় সচেষ্ট বাংলাদেশ নৌ বাহিনী। নৌ বাহিনীর বহরে যুক্ত করা হয়েছে অত্যাধুনিক যুদ্ধ জাহাজ। আগামী বছরের মধ্যে দু’টি যুদ্ধ জাহাজ চীন থেকে আসছে। নিজেদের উদ্যোগে বানানো হচ্ছে আরো দু’টি যুদ্ধজাহাজ। এগুলো যোগ হলে ব্যাপক শক্তিশালী হবে বাংলাদেশ নৌ বাহিনী।
গতকাল বঙ্গোপসাগরে অনুষ্ঠিত মহড়ায় সবধরনের আধুনিক সরঞ্জামের ব্যবহার দেখানো হয়। প্রথমেই ছোঁড়া হয় সার্ফেস টু সার্ফেস মিসাইল। নৌ বাহিনীর দু’টি যুদ্ধজাহাজ (উত্তাল ও দুর্বার) থেকে মিসাইলগুলো নিক্ষেপ করা হয়। এটি ১৬ কিলোমিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুতে হামলা করতে সক্ষম। এরপর বঙ্গবন্ধু যুদ্ধ জাহাজ থেকে ছোঁড়া হয় সোল্ডার লঞ্চ সার্ফেস টু এয়ার মিসাইল। শত্রুপক্ষের ড্রোনটি ধ্বংস করা হয় এই যুদ্ধ জাহাজ থেকে। এর থেকে যখন মিসাইল আকাশে উঠে বিস্ফোরিত হয় তখন আলোর ঝলকানি দেখা যায়।
এরপর ছোঁড়া হয় রকেট ডেপথ সার্চ ফায়ারিং (আরডিসি)। এটি পানির নিচে অবস্থানরত শত্রুপক্ষের সাবমেরিন ধ্বংস করতে সক্ষম। এটি ছোঁড়া হয় যুদ্ধজাহাজ নির্মূল ও দুর্জয় থেকে। এরপর টার্গেটকে লক্ষ্য করে যুদ্ধজাহাজ বঙ্গবন্ধু, দুর্জয় ও নির্মূল থেকে কামানের আদলে গোলাবর্ষণ করা হয়। পরে মহড়া চলে ভ্যাসেল বোট সার্চ এন্ড সিজার দিয়ে। যখন শ্বাসরুদ্ধকর অভিযান চলছিল তখন অন্য সকল প্রতিকূলতাকে উপেক্ষা করে বাণিজ্যিক জাহাজগুলোতে শত্রুপক্ষের কেউ আছে কি-না তা দেখতে কমান্ডোরা অপারেশন পরিচালনা শুরু করে। বিশেষ ভ্যাসেল বোট নিয়ে কমান্ডোরা অভিযানে নামে। তখন বেশ খানিকটা দূরে আরো কিছু কমান্ডো বোট নিয়ে অপেক্ষা করে। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই কমান্ডোরা তল্লাসী করে নিরাপদে চলে আসে। এছাড়া ওই মহড়ায় ১টি পেট্রোল উড়োজাহাজ, ১টি হেলিকপ্টার, ২০টি ছোট যুদ্ধজাহাজের ব্যবহার দেখানো হয়। এর বাইরে সৈন্য নিয়ে যেতে দু’টি হাইস্পিড বোট, গোলাবারুদ নিতে ৮টি ডিফেন্ডার বোটের চমত্কার ব্যবহার প্রত্যক্ষ করেন উপস্থিত সবাই। নৌ বাহিনীর প্রধান ভাইস এডমিরাল ফরিদ হাবিব বলেন, বাংলাদেশের সমুদ্র এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে বৈশ্বিক রাজনীতির কারণে এটি আরো বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের নৌ বাহিনীর বর্তমানে ছোট-বড় ৭০টি যুদ্ধ জাহাজ রয়েছে। তিনি বলেন, নৌ বাহিনীর যে শক্তি দরকার তার জন্য বর্তমান সরকার সবই করছে। নৌ বাহিনীকে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে কাজ করে যাচ্ছে সরকার। তিনি বলেন, আমরা সমুদ্রসীমা রক্ষার জন্য যা যা করা দরকার সবকিছুই করব।
গতকাল এই মহড়ায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিকী। মহড়া শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ভৌগোলিক কারণে বাংলাদেশে গভীর সমুদ্র বন্দর দরকার। যাদের অভিজ্ঞতা আছে এবং বাংলাদেশের স্বার্থ রক্ষা করবে তাদেরই বন্দর নির্মাণ করতে দেয়া হবে। ভারতের সঙ্গে যে মামলা রয়েছে তা মিটে গেলে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া হবে। এছাড়া মহড়ার সময় উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লে. জেনারেল মো. আবু বেলাল, চীফ অব জেনারেল স্টাফ লে. জেনারেল মাইনুল ইসলাম, বিমান বাহিনীর এয়ার কমোডোর হুমায়ন কবীর, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বেনজির আহমেদসহ তিন বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।