প্রথম ধাপের ৯৭ উপজেলা নির্বাচন
চতুর্থ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ভোট যুদ্ধ শুরু হচ্ছে আগামীকাল বুধবার। প্রথম ধাপের এই নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন ঘিরে সহিংসতার আশঙ্কা না থাকলেও পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োগ করা হয়েছে। এখন শুধু রাত পোহানোর অপেক্ষা। কাল সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত দেশের ৪০ জেলার ৯৭ উপজেলায় এই ভোট উত্সব শুরু হবে। এ উপলক্ষে সেখানে সাধারণ ছুটি থাকছে কাল। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় উপজেলা পর্যায়ে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। পর্যাপ্ত পরিমাণ র্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্যও নামানো হয়েছে। গতকাল সোমবার মধ্যরাতেই শেষ হয়েছে মিছিল-মিটিংসহ সব ধরনের প্রচার-প্রচারণা। একই সঙ্গে বন্ধ হচ্ছে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সব ধরনের যান্ত্রিক যান চলাচল। তবে মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের কর্মসূচির ক্ষেত্রে এ নিষেধাজ্ঞা প্রযোজ্য হবে না। স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন দলীয় ব্যানারে না হলেও সব এলাকাতেই দলীয় প্রভাব রয়েছে। নির্বাচনে প্রধান দুই রাজনৈতিক শক্তি আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের পছন্দমতো প্রার্থী দিয়েছে। একইসঙ্গে বড় দল দুটির অসংখ্য বিদ্রোহী প্রার্থীও ভোটযুদ্ধে অংশ নিচ্ছেন। অন্যদিকে বিএনপি অংশ নেয়ায় এ নির্বাচন নিয়ে নানা কারণে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে ব্যাপক উত্সাহ রয়েছে।
ইসি সূত্র জানায়, গত ১৯ জানুয়ারি নির্বাচন কমিশন প্রথম ধাপের ১০২টি উপজেলার তফসিল ঘোষণা করলেও বুধবার ভোট হবে ৪০ জেলার ৯৭টি উপজেলায়। সীমানা নির্ধারণ নিয়ে জটিলতার কারণে রংপুরের চারটি উপজেলায় নির্বাচন স্থগিত রয়েছে। এগুলো হলো—রংপুর সদর, কাউনিয়া, গঙ্গাচরা ও পীরগাছা। এ ধাপের পীরগঞ্জ উপজেলার ভোট হবে ২৪ ফেব্রুয়ারি। এবার পীরগঞ্জসহ ৯৮টি উপজেলায় মোট ১ হাজার ২৭৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অংশ নিয়েছেন। এদের মধ্যে চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন ৪৩২ জন। ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংখ্যা ৫১৩ জন, মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর সংখ্যা ৩২৯ জন। মোট ভোটার ১ কোটি ৬৪ লাখ ৭৮ হাজার ১৭২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৮১ লাখ ৯১ হাজার ৫৩৭ জন, মহিলা ভোটার ৮২ লাখ ৮৬ হাজার ৬৩৫ জন। ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৬ হাজার ৯৯৫টি, ভোটকক্ষ ৪৩ হাজার ২৯০টি। প্রিসাইডিং অফিসার প্রতি ভোট কেন্দ্রে একজন করে ৬ হাজার ৯৯৫ জন। সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার প্রতি ভোটকক্ষের জন্য একজন করে মোট ৪৩ হাজার ২৯০ জন এবং পোলিং অফিসারের সংখ্যা ৮৬ হাজার ৫৮০ জন।
নিরাপত্তা জোরদার
নির্বাচন ঘিরে ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে ইসি। তাছাড়া সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আলাদা নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সুষ্ঠু, অবাধ ও শান্তিপূর্ণভাবে প্রথম ধাপের নির্বাচন করতে সোমবার থেকে এসব উপজেলায় সেনাবাহিনী নামানো হয়েছে। নির্বাচন পরবর্তী দুইদিন পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবে। প্রতি উপজেলায় ১ প্লাটুন করে সেনাবাহিনীর সদস্য টহল দিচ্ছেন। বড় উপজেলায় এ সংখ্যা প্রয়োজন হলে আরো বাড়াবে ইসি। পাশাপাশি প্রতি উপজেলায় সেনাবাহিনীর দুই থেকে তিনটি গাড়ি রয়েছে। সঙ্গে সেনাবাহিনীর কমান্ডিং অফিসার ও একজন করে ম্যাজিস্ট্রেট রয়েছেন। মোবাইল ফোর্স হিসেবে পর্যাপ্ত পরিমাণ র্যাব, বিজিবি, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছেন। এছাড়া প্রতি কেন্দ্রে একজন পুলিশ, অঙ্গীভূত আনসার একজন, অঙ্গীভূত আনসার ১০ জন (মহিলা-৪, পুরুষ-৬) এবং আনসার একজন ও গ্রামপুুলিশ একজন করে আইন-শৃঙ্খলার দায়িত্বে রয়েছেন। পার্বত্য এলাকা, দ্বীপাঞ্চল ও হাওর এলাকায় এ সংখ্যা শুধু পুলিশের ক্ষেত্রে দু’জন হবে। এছাড়া ভোটের দিনের জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় ৩৮৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ৯৭ জন বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করা হয়েছে।
নির্বাচনে নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সন্দেহ
ইসি কর্মকর্তারা জানান, উপজেলা নির্বাচনে যে হারে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসাবে নিযুক্ত করা হয়েছে তাতে কার্যত এই নির্বাচনের উপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে ইসি। চার ধাপের ৫৫ জেলাতেই রিটার্নিং অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এডিসি) ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা (ইউএনও)। অন্যদিকে ৯টি জেলার রিটার্নিং কর্মকর্তা করা হয়েছে কমিশনের সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে। জেলা ও উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা সরকারি কর্মকর্তাদের নির্বাচনী কাজে সহায়তা করছে মাত্র।
কেন্দ্রীয় মনিটরিং শুরু আজ
অবশেষে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা ও ইসি কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল গঠন করেছে ইসি। সোমবার ইসির উপ-সচিব মিহির সারওয়ার স্বাক্ষরিত চিঠি সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগে পাঠানো হয়েছে। আজ মঙ্গলবার থেকে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত টানা তিন দিন এ সেল কাজ করবে। নির্বাচন পূর্ব, নির্বাচনের দিন ও পরবর্তী অনিয়ম নিয়ে কাজ করবে এ সেল। এছাড়া এলাকার শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার্থে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর যোগাযোগ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হবে।
দায়িত্বে অবহেলা করলেই ব্যবস্থা
নির্বাচনী দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা দায়িত্বে অবহেলা করলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছে নিবার্চন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ। গতকাল নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।
নির্বাচনী এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা
নির্বাচনে ভোটগ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। গতকাল সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব এএসএম মুস্তাফিজুর রহমান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়। সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকায় ঘোষিত ছুটির দিনগুলো হলো, প্রথম পর্যায়ে ১৯ ফেব্রুয়ারি বুধবার ৯৭টি ও ২৪ ফেব্রুয়ারি রংপুর জেলার পীরগঞ্জ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার ১১৭টি উপজেলা, ১ মার্চ শনিবার কক্সবাজার জেলার মহেশখালী ও তৃতীয় পর্যায়ে ৮৩টি উপজেলায় ১৫ মার্চ শনিবার।
উল্লেখ্য, ৪৮৭টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন ছয় ধাপে করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে ইসি। দ্বিতীয় ধাপে ১১৬ উপজেলায় ২৭ ফেব্রুয়ারি, তৃতীয় ধাপে ৮৩ উপজেলায় ১৫ মার্চ এবং চতুর্থ ধাপে ৪২ জেলায় ৯২টি উপজেলায় ভোট হবে ২৩ মার্চ। চলতি সপ্তাহে পঞ্চম ধাপের তফসিল ঘোষণার কথা রয়েছে।