জনলোকপাল বিল উত্থাপন ছাড়াই শেষ হয়েছে বিধানসভার অধিবেশন। প্রতিবাদে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন আম আদমি পার্টির (এএপি) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল।
বিধানসভায় কেজরিওয়াল বলেছিলেন, ‘বিল উত্থাপন না-হওয়ায় তাঁর ইস্তফা দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। সম্ভবত এটাই শেষ অধিবেশন।’ আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত মেয়াদ থাকলেও স্পিকার বিধানসভা অনির্দিষ্টকালের জন্য মুলতবি ঘোষণা করেছেন।
এর আগে সরকারের পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক করতে জরুরি বৈঠক ডেকেছিল এএপি। ওই বৈঠকেই কেজরিওয়াল ইস্তফা-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেন।
জনলোকপাল বিল উত্থাপিত না হওয়ার কারণ হিসেবে বিধানসভায় কেজরিওয়াল বলেছেন, তাঁরা দুর্নীতি দূর করতে চান, কংগ্রেস-বিজেপি চায় না। বিলের বিরুদ্ধে কংগ্রেস ও বিজেপি একজোট হয়েছে। কারণ, তিন দিন আগে তাঁর সরকার মুকেশ আম্বানিদের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছে। তিনি অভিযোগ ছুড়ে দিয়ে বলেন, এই দুই পার্টি আম্বানিদের কাছ থেকে টাকা পায় বলে তাঁরা বিলের বিরোধিতা করছেন।
এর আগে তেলেঙ্গানা বিল নিয়ে ভারতের পার্লামেন্ট যেভাবে উত্তাল হয়েছিল, জনলোকপাল বিল নিয়েও অনেকটা সে রকম উত্তাল হয়ে ওঠে দিল্লি বিধানসভা। পার্থক্য একটাই, লোকসভার মতো বিধানসভায় সহিংসতা দেখা যায়নি। তবে জনলোকপাল বিলকে কেন্দ্র করে দিল্লিতে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হতে চলেছে।
আজ শুক্রবার দিনভর নানা টালবাহানার পর বিরোধীদের আপত্তি উপেক্ষা করে মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল জনলোকপাল বিলটি বিধানসভায় পেশ করার দাবি জানান। তবে শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটিতে দেখা যায়, বেশির ভাগ সদস্যই বিল পেশের বিরুদ্ধে। স্পিকারও বিল পেশ হয়নি বলে রুলিং দেন। আগামীকাল শনিবার বিধানসভার এই বিশেষ অধিবেশনের শেষ দিন। অথচ এই বিলকে অসাংবিধানিক বলে স্পিকারকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন দিল্লির উপরাজ্যপাল।
সরকারি ক্ষেত্রে দুর্নীতি রুখতে প্রবীণ গান্ধীবাদী নেতা আন্না হাজারে যে আন্দোলন শুরু করেছিলেন, তারই পরিণতি কেন্দ্রীয় স্তরে লোকপাল গঠন। রাজ্য হিসেবে দিল্লির চরিত্র একটু বিশেষ ধরনের। দেশের রাজধানী হওয়ার কারণে দিল্লি পূর্ণাঙ্গ রাজ্যের মর্যাদা পায়নি। আইন অনুযায়ী জনলোকপালের মতো যেসব বিলে কেন্দ্রের আর্থিক সহায়তা দরকার, সেগুলো পেশ করার আগে কেন্দ্রের অনুমতি নিতে হবে। এই আইনেরই বিরোধিতা করছে এএপি। এ নিয়েই উপরাজ্যপালের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বিরোধ।
উপরাজ্যপাল নাজিব জং সকালে বিধানসভার স্পিকার এম এস ধীরকে চিঠি লিখে জানান, কেন্দ্রীয় অনুমতি যেহেতু নেওয়া হয়নি, সেহেতু বিলটি অসাংবিধানিক। সভার শুরুতেই সেই চিঠির জন্য বিজেপি ও কংগ্রেস একযোগে দাবি জানাতে থাকে। সভা মুলতবি করে দিয়ে স্পিকার সর্বদলীয় বৈঠক ডাকেন। আধঘণ্টা পর সভা শুরু হলে স্পিকার চিঠিটি পড়েন। এএপি সেই চিঠি নিয়ে আলোচনার দাবি জানাতে থাকে। সেই গোলমালের মধ্যেই মুখ্যমন্ত্রী বিলটি পেশ করেছেন বলে দাবি করেন। সভা দ্বিতীয়বারের জন্য মুলতবি করে দেওয়া হয়। আধঘণ্টা পর সভা শুরু হলে বিল পেশ ও বিল-সংক্রান্ত আইনি জটিলতা নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। বিল উত্থাপন হয়েছে কি না, সে বিষয়ে স্পিকার সদস্যদের মত জানতে চান। ২৭ জন বিলের পক্ষে থাকলেও ৪২ জন আপত্তি জানানোয় বিলটি উত্থাপনই হয়নি বলে স্পিকার রুলিং দেন।
জনলোকপাল নিয়ে এএপি সরকারের সঙ্গে কংগ্রেস ও বিজেপির যে টানাপোড়েন চলছে, তা সম্পূর্ণভাবেই রাজনৈতিক। এএপির বক্তব্য, বিল পাস না করালে এটাই প্রমাণিত হবে যে কংগ্রেস ও বিজেপি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে আগ্রহী নয়। বিরোধীদের দাবি, তাঁরা জনলোকপালের পক্ষে, কিন্তু বিলটি প্রথামাফিক আনতে হবে।