বঙ্গবন্ধু ও জেলহত্যা মামলার অন্যতম সাক্ষী কমোডর (অব.) গোলাম রাব্বানী হত্যা মামলায় আসামি আবু নাসের চৌধুরী ও হুমায়ুন কবির চৌধুরীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় দিয়েছেন হাইকোর্ট।
অপর আসামি মো. সেলিমের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রেখেছেন আদালত। খালাস পাওয়া আসামি মো. সাইফুল ইসলামের ক্ষেত্রে পুনর্বিবেচনার আবেদনটি বিচারিক আদালতে পাঠাতে বলা হয়েছে।
অপর আসামি সোহেল প্রকাশ আবদুল মালেককে খালাস দিয়েছেন আদালত।
আজ বুধবার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীম ও বিচারপতি মো. আকরাম হোসেন চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিদের আপিল ও রাষ্ট্রপক্ষের পুনর্বিবেচনার আবেদনের ওপর শুনানি নিয়ে এ রায় দেন। একই সঙ্গে আদালত রায়ের অনুলিপি পাওয়ার ছয় সপ্তাহের মধ্যে চার আসামিকে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
আলোচিত ওই মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত চার আসামি জামিনে ছিলেন। আসামি সোহেল কারাগারে আছেন।
২০০৪ সালে ১১ এপ্রিল গুলিবিদ্ধ হন গোলাম রাব্বানী। সে সময় তিনি কোরিয়ান এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনে (কেইপিজেড) ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন। ওই বছরের ২৪ এপ্রিল তিনি মারা যান।
আদালত সূত্র জানায়, ওই ঘটনায় কেইপিজেডের সাবেক পরিচালক আবু নাসের চৌধুরী ও কর্মচারী হুমায়ুন কবির চৌধুরীর নাম উলেখ করে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় ২০০৪ সালের ১১ এপ্রিল কেইপিজেডের সাইট ইঞ্জিনিয়ার এ কে এম এমতাজুল ইসলাম এজাহার দায়ের করেন। ওই বছরের ২৮ আগস্ট সাত আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। তাঁরা হলেন আবু নাসের চৌধুরী, হুমায়ুন কবির চৌধুরী, সাইফুল ইসলাম ওরফে বিলাই সাইফুল, মনছুর আলম, মো. সেলিম, সোহেল প্রকাশ আবদুল মালেক ও মো. হাশেম।
বিচারিক আদালতের রায়: ২০০৫ সালের ৭ এপ্রিল চট্টগ্রামের দ্রুত বিচার আদালত রায় ঘোষণা করেন। এই রায়ে মো. সেলিম, মো. হাশেম ও সোহেলের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় তাঁদের কমোডর গোলাম রাব্বানী হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
এজাহারে উল্লিখিত আসামি আবু নাসের চৌধুরী ও হুমায়ুন কবির চৌধুরীর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১২০(বি)/৩০২ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় রাব্বানী হত্যার ষড়যন্ত্র করার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে প্রত্যেককে পাঁচ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড এবং ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা অনাদায়ে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়।
এ ছাড়া আসামি সাইফুল ইসলাম ওরফে বিলাই সাইফুল, মনছুর আলমের বিরুদ্ধে আনীত দণ্ডবিধির ১২০(বি)/১০৯/৩০২/৩৪ ধারার অভিযোগ প্রসিকিউশন পক্ষ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে না পারায় বেকসুর খালাস প্রদান করা হয়।
নিম্ন আদালতের রায়ের পর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিরুদ্ধে আপিল করেন আসামি হাশেম। শুনানি শেষে ২০০৮ সালের ৭ আগস্ট হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ হাশেমের আপিল মঞ্জুর করে তাঁকে দেওয়া দণ্ডাদেশ বাতিল করেন। ফলে খালাস পান হাশেম।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই রায়ের বিরুদ্ধে অপর আসামিরা ২০০৫ সালে হাইকোর্টে পৃথক আপিল করেন। রাষ্ট্রপক্ষ দুই আসামি আবু নাসের ও হুমায়ুন কবিরের সাজা বৃদ্ধি চেয়ে এবং আসামি সাইফুলের খালাসের বিরুদ্ধে পুনর্বিবেচনার আবেদন করে। শুনানির পর ২০০৫ সালের ২ আগস্ট হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ রুল জারি করেন।