in15_mobile_23410f_43055
রং নম্বরে প্রেম, অতঃপর খুন

রং নম্বর থেকে প্রথমে ফোনটা আসে। পরে একই নম্বর থেকে আরো কয়েকবার ফোন। কথার সূত্র ধরে এক পর্যায়ে হয় পরিচয়। বাড়তে থাকে ঘনিষ্ঠতা। সেখান থেকে ভালোলাগা। ভালোবাসা। ভালবাসা গড়ায় অবৈধ সম্পর্কে। অবৈধ মেলামেশার দৃশ্য ধারণ হয় মোবাইলে, ল্যাপটপে। এরপরই ভালবাসার ইতি ঘটিয়ে সম্পর্ক গড়ায় ব্লাকমেইল পর্যায়ে। অতঃপর সম্মান বাঁচাতে ঠাণ্ডা মাথায় খুন। সিনেমাকে হার মানানো এমনই এক গা ছমছম করা সত্যঘটনা বর্ণনা করেছেন চাঞ্চল্যকর বাচ্চু হত্যাকাণ্ডের আসামী ফাহরিনা মিষ্টি।

গত বছরের ৩০ ডিসেম্বর বেসরকারি সিকিউরিটি কোম্পানি ‘সিকিউরেক্স’-এর ব্যবস্থাপক সরদার রফিকুজ্জামান ওরফে বাচ্চুকে (৪০) রাজধানীর কাফরুল থানাধীন ৪৫৯/১ নম্বর বাড়ির পঞ্চম তলার একটি রুম থেকে হাত-পা বাঁধা, জবাই করা অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনে ধারাবাহিক অভিযান চালাচ্ছিল ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। চলেছে বছরব্যাপী তদন্ত কার্যক্রম। অবশেষে গত রবিবার রাত সাড়ে ১১টায় ডিবির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার সাইফুল ইসলাম ও জ্যেষ্ঠ সহকারী কমিশনার তৌহিদুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল ডিবি অভিযান চালিয়ে রাজধানীর খিলগাঁও থানাধীন মাটির মসজিদ এলাকার একটি বাড়ি থেকে ফাহরিনা ওরফে মিষ্টিকে (৩০) গ্রেপ্তার করে। তার কাছ থেকে উদ্ধার হয় বাচ্চুর সঙ্গে অবৈধ দৈহিক সম্পর্ক স্থাপনের দৃশ্য সংবলিত ল্যাপটপ, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মিষ্টির একটি ওড়না এবং একটি মোবাইল ফোন।

ডিবি সূত্রে জানা গেছে, বছর পাঁচেক আগে রং নম্বরে মিষ্টির সঙ্গে বাচ্চুর পরিচয়। পরিচয় থেকে প্রেম। প্রেম থেকে অবৈধ দৈহিক সম্পর্ক। দুজনই বিবাহিত। তাদের প্রত্যেকের ঘরে একটি করে সন্তান আছে। অবৈধ দৈহিক সম্পর্কের ভিডিও বাচ্চু মোবাইল ফোনে ও ল্যাপটপে ভিডিও করে রাখত। পরবর্তীতে বাচ্চু ডিভিও ইন্টারনেটে প্রকাশ করার ভয় দেখিয়ে মিষ্টির কাছ থেকে টাকা পয়সা আদায় করত। মিষ্টি অপারগতা প্রকাশ করলে বাচ্চু ডিভিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দিয়ে তার সংসার ভেঙে দেয়ার হুমকি দিত। এমন ভয় দেখিয়ে বাচ্চু তার বন্ধুদের সঙ্গেও মিষ্টিকে দৈহিকভাবে মিলিত হতে বাধ্য করেছে। বাচ্চু মিষ্টির কাছ থেকে দেড় ভরি ওজনের স্বর্ণের বালা ও নগদ ৮০ হাজার টাকা নিয়েছে। এছাড়াও অন্যান্য সময় বিভিন্ন অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রায় পাঁচ বছর ধরেই এমন অবস্থায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে মিষ্টি। শেষ পর্যন্ত মিষ্টি বাচ্চুকে খুন করার পরিকল্পনা করে।

পরিকল্পনা মোতাবেক মিষ্টি বাচ্চুর সঙ্গে বনানীতে দেখা করে। এরপর দুজনে সিএনজি করে কাফরুলে বাচ্চুর বাসায় যায়। মিষ্টি তার ইচ্ছেমতো বাচ্চুর সঙ্গে দৈহিক সম্পর্ক স্থাপন করার প্রস্তাব দেয়। তাতে রাজি হয় বাচ্চু। এমন প্রলোভনে মিষ্টি বাচ্চুকে চেয়ারে বসিয়ে পা গামছা দিয়ে চেয়ারের পায়ের সঙ্গে বাঁধে। আর হাত দুটি মিষ্টি তার ওড়না দিয়ে চেয়ারের সঙ্গে বাঁধে। বাচ্চুকে চোখ বন্ধ করতে বলে। চোখ বন্ধ করলে পার্সে রাখা ছুরি দিয়ে বাচ্চুকে জবাই করে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে বাচ্চুর ঘাড়ে ও বুকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাত করে। হাত ধরে ফেললে মিষ্টি কামড় দিয়ে হাত ছাড়িয়ে নেয়। ঘটনার আগের দিন সড়ক দুর্ঘটনায় বাচ্চুর বাম হাত ভেঙে যায়। ফলে বাচ্চুর শরীর ছিল দুর্বল। এটি বাচ্চুকে খুন করার সুযোগ এনে দেয় মিষ্টিকে।

মিষ্টি লাশটি রুমে রেখে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি, ডিভিও দৃশ্য ধারণ করা বাচ্চুর মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ নিয়ে ঘরে তালা দিয়ে পালিয়ে যায়। পরে বাচ্চুর মোবাইল ফোন ও ছুরিটি রাস্তায় ফেলে ল্যাপটপ নিয়ে খিলক্ষেতের বাসায় যায়।

সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে ডিবির পশ্চিম, উত্তর ও মিডিয়া বিভাগের উপ-কমিশনার জাহাঙ্গীর হোসেন মাতুব্বর, নাজমুল আলম ও মাসুদুর রহমানের উপস্থিতিতে ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও ডিবির যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, মোবাইল ফোনে রং নম্বরে দুজনের পরিচয়। সেই থেকে প্রেম। আর তা থেকেই অবৈধ শারীরিক সম্পর্ক। বাচ্চু অবৈধ মেলামেশার দৃশ্য মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপে ভিডিও করে রাখত। এমন ভিডিওকে পুঁজি করে মিষ্টির কাছ থেকে টাকা পয়সা হাতিয়ে নিত বা মিষ্টিকে অন্য পুরুষদের সঙ্গে অবৈধ মেলামেশা করতে বাধ্য করত। দীর্ঘদিন এ অবস্থা চলায় অতিষ্ঠ হয়ে মিষ্টি কৌশলে বাচ্চুকে হত্যা করে।