10668_commonsব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশ বিষয়ক অল পার্টির পার্লামেন্টারি  গ্রুপের চেয়ারম্যান এ্যান মেইন এমপি বলেছেন, শুধুমাত্র সমঝোতার অভাবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি সহিংস আকার ধারণ করেছে। জনগণের মৌলিক অধিকারের তোয়াক্কা না করে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকার চিন্তায় মগ্ন থাকায় বাংলাদেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে না। তিনি বলেন, উন্নয়সহযোগী দেশ হিসেবে ব্রিটেন বাংলাদেশে শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে। তাই দেশের স্বার্থে ও জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠায় যত দ্রুত সম্ভব আন্তরিক পরিবেশে আলোচনা করে সমঝোতার মাধ্যমে উভয় দলকে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনে মতৈক্যে পৌঁছা উচিত। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন না হলে বাংলাদেশে চরম বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। ব্রিটেনের হাউস অব কমন্সে ওভারসিজ স্টুডেন্ট অর্গানাইজেশন ‘বাংলাদেশী স্টুডেন্ট ইউনিয়ন ইউকের উদ্যোগে আয়োজিত ‘বাংলাদেশের রাজনৈতিক ব্যর্থতা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি’ শীর্ষক সেমিনারে এ্যান মেইন এমপি এসব কথা বলেন।
ব্রিটিশ এমপি ম্যাথো অফার্ডের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশী স্টুডেন্ট ইউনিয়ন ইউকের চেয়ারপার্সন আতা উল্লাাহ ফারুক। সেমিনারে বক্তব্য রাখেন স্টিফেন অ. ব্রায়েন এমপি, জিম ফিট প্রেট্রিক এমপি, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান আব্বাস ফায়েজ, আর্ন্তজাতিক যুদ্ধাপরাধ, সন্ত্রাসবাদ ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ আইনজীবি টবি ক্যাডম্যান, পার্লামেন্টারি রিসার্চ স্পেশালিষ্ট মিরা সোনেচা, রিড্রেস এর ডিরেক্টর লাটিজা পালানি, কূটনৈতিক ফাতিমা আহমদ, মানবাধিকার সংগঠক কাপিল, কমনওয়েলথ এর ভারপ্রাপ্ত হেড অব হিউম্যান রাইটস ক্যারন মেক ক্যানিজ, ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির রিসার্স ফেলো ফ্লিক অসবর্ণ, ডিইয়া হু লী, সারা পাইন, রিচেল পিক কেরিং, লন্ডন ইম্প্যারিয়াল কলেজ এর মি. নাট, হিউম্যান রাইটস সংগঠক  সুমী বেওজামিন প্রমুখ। এ্যান মেইন এমপি আরও বলেন, সরকারের আন্তরিকতার অভাবে বাংলাদেশের গার্র্মেন্টস শিল্পের শ্রমিকরা মানবেতর জীবন যাপন করছে। রাজনৈতিক কারণে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর হামলা হচ্ছে বলে কর্তৃপক্ষ দায় এড়িয়ে যেতে চাইলেও এখন পর্যন্ত মূল অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে না।
এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের আব্বাস ফায়েজ সংখ্যালঘুদের উপর হামলায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর হামলা হয়েছে। এ বিষয়ে সবাই কথা বললেও রাজনৈতিক দলগুলো একে অন্যকে দোষারূপ করছে। সরকার এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে এখন পর্যন্ত কাউকে আইনের আওতায় আনেনি। সরকারের উচিত স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে এ সবের তদন্ত করা। তিনি ক্রসফায়ারকে মানবতাবিরোধী উল্লেখ করে বলেন, এর মাধ্যমে অপরাধীরা ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হয়। এটা আইনের শাসনের কোনো নমুনা হতে পারে না।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার একটি অপার সম্ভানাময় দেশ। স্বাধীন হওয়ার ৪৩ বছর পেরিয়ে গেলেও দেশটিতে এখনও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আসেনি। সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে পারস্পরিক হৃদ্যতা ও রাজনৈতিক সহমর্মিতার অভাবে পরিস্থতি জটিল আকার ধারণ করেছে। তাই আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায় এবং উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলো মনে করে অতি দ্রুত সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন বাংলাদেশে খুবই জরুরী।
সেমিনারের আয়োজক ‘বাংলাদেশী স্টুডেন্ট ইউনিয়ন’ ইউকে চেয়ারপার্সন আতা উল্লাহ ফারুক বলেন, বাংলাদেশের চলমান পরিস্থিতিকে মানবিক বিপর্যয় উল্লেখ করে বলেন, শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে আমরা সুদূর প্রবাসে থাকলেও দেশের সংকটে ভূমিকা রাখা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। বাংলাদেশে ক্রসফায়ারের নামে যেভাবে মানুষ হত্যা করা হচ্ছে সেটা শুধু অমানবিকই নয়, চরম মানবতাবিরোধী কাজ। বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য সকল রাজনৈতিক দলকে একসঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত যাতে আমরা সুন্দর শান্তিপূর্ণ স্থিতিশীল বাংলাদেশ পেতে পারি। সেমিনারে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের প্রতিনিধি, রাজনৈতিক বিশ্লেষক, আইনজীবী , সাংবাদিক, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন