রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার জের ধরে ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট। তবে সান্ধ্য মাস্টার্স কোর্সের ভর্তি, ক্লাস ও পরীক্ষাসহ শিক্ষার নামে যাবতীয় ব্যবসায়িক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এদিকে গত কয়েক মাসে রাজনৈতিক অস্থিরতায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা সেশনজটে পড়ছেন। অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষণায় সেই জট অনেক গুণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় না খুলে দিলে আগামী কয়েক বছর এই জট থাকবে বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আনোয়ার হোসেন। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে হিসাব বিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের সান্ধ্য এমবিএ কোর্সের চারটি সেমিস্টারের পরীক্ষা চলছে। ওই বিভাগের ২০১৪ বর্ষের জানুয়ারি-জুন ১২ ব্যাচের ভর্তি কার্যক্রম সোমবার থেকে শুরু হচ্ছে। বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার আবু সামা সরকার বলেন, নতুন ব্যাচের মৌখিক পরীক্ষা সোমবার সকাল ১০ টা থেকে শুরু হবে। মৌখিক পরীক্ষায় যারা টিকবে তারা আজকেই ভর্তি হতে পারবেন। ওই ব্যাচের উদ্বোধনী ক্লাস শুরু হবে আগামী ১৩ই ফেব্র“য়ারি থেকে। ফাইনান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগে নতুন ১২ তম ব্যাচের গত ৩১শে জানুয়ারি উদ্বোধনী ক্লাস শুরু হওয়ার পর থেকে প্রতি শুক্রবার ও শনিবার বিকাল ৩ টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টা পর্যন্ত এখন নিয়মিত ক্লাস হচ্ছে। আইন অনুষদের সান্ধ্যকালীন দুই বছর মেয়াদী এলএলএম কোর্সের ভর্তি কার্যক্রম চলছে। ভর্তির শেষ দিন আগামী ১৬ই ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বলে জানান ওই অনুষদের সহকারি রেজিস্ট্রার আখতারুজ্জামান। এছাড়া সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে সাতটি বিভাগে চালুকৃত সান্ধ্যকোর্সের ভর্তি কার্যক্রম চলছে। তবে ওই অনুষদের অধীনে ক্লাস কবে থেকে শুরু হবে তা এখনও ঠিক করা হয়নি বলে জানান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আনসার উদ্দিন।
বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণায় নিয়মিত শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে। অথচ সান্ধ্যকোর্সের শিক্ষার্থীরা তাদের কার্যাক্রম নির্বিঘেœ চালিয়ে যাচ্ছেন। এনিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তারা বিষয়টিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ মনোবৃত্তির বহি:প্রকাশ বলে মনে করছেন।
সূত্র মতে, গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে শুরু হওয়া রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮টি অনুষদে ৪৭ বিভাগের মধ্যে অন্তত ৩৭টি বিভাগের একাধিক বর্ষের চূড়ান্ত পরীক্ষা এখনও শেষ হয়নি। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষবর্ষ ১ জানুয়ারি থেকে শুরু করার কথা থাকলেও ভর্তি কার্যক্রমই শেষ করতে পারেনি প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আনোয়ার হোসেন জানান, এ বছর ঠিক সময়ে শিক্ষাবর্ষ শুরু করতে না পারায় শিক্ষার্থীরা এমনিতেই সেশনজটে পড়েছে। তার উপর ক্যাম্পাস অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে যাওয়ার ফল আগামী কয়েকবছর ভোগ করতে হবে। এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. মিজানউদ্দিন বলেন, আমরা তো চাই বিশ্ববিদ্যালয়ে খোলা থাকুক। সকলের ক্লাস চলুক। কিন্তু শিক্ষার্থীরাই যদি আন্দোলন করে শিক্ষার পরিবেশ বিঘিœত করতে চায় তখন আমাদের আর কি করার থাকে।