ঝড়, তুমুল বৃষ্টি, বন্যা ব্রিটেনের ভাগ্যে এখন এদেরই ঘনঘটা। শুরুটা হয়েছিল গত বছরের এক্কেবারে শেষ লগ্নে। নতুন বছরের বেশ কিছুটা কেটে গেলেও ব্রিটেনের অবস্থার কোনও পরিবর্তন নেই। গত বুধবারই প্রবল ঝড়-বৃষ্টির কবলে পড়েছিল ব্রিটেন। তার জের কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই সপ্তাহান্তে ফের নতুন বিপর্যয়ের অশনি সঙ্কেত দিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
এবং গত বেশ ক’বারের মতো এ বারও সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে দক্ষিণ-পশ্চিম ব্রিটেন। আবহাওয়া দফতরের এই হুঁশিয়ারি শুনে উদ্বিগ্ন প্রশাসন। ডিসেম্বর থেকে টানা চলতে থাকা ঝড়-বৃষ্টির জেরে এমনিতেই দক্ষিণ-পশ্চিম ব্রিটেনের অবস্থা শোচনীয়। প্রশাসনিক তথ্যই বলছে, দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলের বেশ খানিকটা এলাকা ইতিমধ্যেই সমুদ্রের গর্ভে চলে গিয়েছে। ফুঁসে ওঠা সমুদ্রের সঙ্গে লাগাতার যুঝতে গিয়ে স্থানীয় বন্যা-প্রতিরোধ ব্যবস্থাও বিপর্যস্ত। তার উপর যদি সেই এলাকাতেই চলতি বছরের সব চেয়ে শক্তিশালী ঝড়টি আছড়ে পড়ে, তা হলে পরিস্থিতি যে নিশ্চিত ভাবেই আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে, তা ভেবে উদ্বিগ্ন প্রশাসন।
আর সেই চিন্তাই বাড়িয়েছে পরিবেশ সংস্থার ভবিষ্যদ্বাণী। তাদের দাবি, মূল ভূখণ্ডে ঘণ্টায় ৪০ থেকে ৫০ মাইল বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে। উপকূল এলাকায় হাওয়ার বেগ হবে প্রতি ঘণ্টায় ৮০ মাইল। পাশাপাশি, প্রবল বৃষ্টিরও আশঙ্কা করছে পরিবেশ দফতর।বন্যা বিধ্বস্ত মোরল্যান্ডের ছবি তুলতে ব্যস্ত এক চিত্রসাংবাদিক। শুক্রবার। ছবি: এএফপি।বিপদ বুঝে গত রাতেই সমারসেট কাউন্টির বহু বাসিন্দাকে এলাকা থেকে সরিয়ে দিয়েছেন পুলিশকর্মীরা। শুক্রবার সকালে মুরল্যান্ড গ্রামের ৮০টি বাড়ি খালি করা হয়েছে। কিন্তু পুলিশের দাবি, বারবার বলা সত্ত্বেও বেশ কিছু বাসিন্দা বাড়ি ছেড়ে যেতে রাজি হননি।
অন্য দিকে, আবহাওয়া অফিসের লরা ইয়ং বলেছেন, “আগামিকালের ঝোড়ো হাওয়ায় সব চেয়ে বেশি ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে কর্নওয়াল, ডেভন এবং সাউথ ওয়েলসের।” পাশাপাশি, প্রবল বৃষ্টির সম্ভাবনাও রয়েছে ওই এলাকাগুলিতে। সপ্তাহান্তের দুর্যোগের কথা ভেবে প্রতিরোধ-ব্যবস্থার আয়োজন চললেও বুধবারের ঝড়-বৃষ্টির জের কী ভাবে সামলে ওঠা যায়, তা এখনও সুষ্ঠু ভাবে ভেবে উঠতে পারেনি প্রশাসন। রেল পরিষেবা সংস্থা আগেই জানিয়েছিল, লন্ডন থেকে পেনজান্স পর্যন্ত যে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল, তা প্রবল ভাবে ব্যাহত হয়েছে। ডয়লিশে রেল লাইনের অনেকটা অংশ ভেঙে ইতিমধ্যেই সমুদ্রের তলায়। পরিষেবা সংস্থা জানিয়েছে, আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণে না এলে, মেরামতির কাজ শুরু করা অসম্ভব। অন্য দিকে, সমুদ্রের প্রবল জলোচ্ছাসে ভেঙে পড়েছে রেল লাইন লাগোয়া বাড়িগুলির বেশ খানিকটা অংশ। প্রাণ বাঁচাতে আপাতত কেউ আশ্রয় নিয়েছেন বন্ধুর বাড়ি, কেউ বা আত্মীয়ের বাড়ি। কবে যে তাঁরা নিজের বাড়িতে ফিরবেন, জানা নেই।
এর পাশেই নয়া সঙ্কট হিসেবে দেখা দিয়েছে চুরি। বন্যার ভয়ে বাসিন্দারা বাড়ি ছেড়ে চলে গেলে সুযোগ বুঝে সেখানে ব্যাপক চুরি-হাতসাফাই হচ্ছে বলে অভিযোগ। পুলিশ আশ্বস্ত করলেও সে কারণেই বাড়ি ছাড়তে নারাজ বহু বাসিন্দা। পরিস্থিতি দেখে এ বার উদ্ধারকাজের তদারকির দায়িত্ব নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন। স্থানীয় প্রশাসন জানিয়েছে, সমারসেটের অবস্থা ঘুরে দেখতে আসতে পারেন ডেভিড। তার আগে তড়িঘড়ি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে প্রশাসন। সপ্তাহান্তের দুর্যোগের পরও সে চেষ্টা একই রকম চলতে থাকে কি না, সেটাই দেখার।