নদীর চরে কাদাপাথরের উপর সারি সারি পায়ের ছাপ। ছোট-বড়, নানা মাপের অন্তত ৫০টি! ব্রিটেনের নরফকে ওই চিহ্নগুলোর গঠন-মাপ-গতিবিধি দেখে সন্দেহ জাগে গবেষকদের। তদন্ত শুরু করে ব্রিটিশ মিউজিয়াম, ন্যাশনাল হিস্ট্রি মিউজিয়াম এবং লন্ডনের কুইন মেরি বিশ্ববিদ্যালয়। আর তার রিপোর্ট হাতে পেতেই উচ্ছ্বসিত ব্রিটেন।
রিপোর্টে বলা হয়েছে, পায়ের ছাপগুলির বয়স প্রায় ৮ লক্ষ বছর। সে সময় মানুষ গোষ্ঠীবদ্ধ ভাবে থাকত। গবেষকদের সন্দেহ, সে রকমই একটি জনগোষ্ঠী নদীর পার ধরে যাওয়ার সময় ওই ছাপ রেখে যায়। ইউরোপে এত পুরনো পায়ের ছাপের দেখা মিলল এই প্রথম। স্বাভাবিক ভাবেই এ হেন আবিষ্কারে উত্তেজিত ব্রিটিশ গবেষকরা। ‘প্লস ওয়ান’ বিজ্ঞান পত্রিকায় খবরটি প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকদের দাবি, ছোট-বড় সকলেরই উপস্থিতির প্রমাণ রয়েছে পায়ের মাপে। এর মধ্যে একটি পায়ের ছাপ প্রায় ১ ফুট লম্বা। গবেষকদের হিসেব বলছে, ওই নির্দিষ্ট ব্যক্তির উচ্চতা ছিল প্রায় ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি। উত্তর ইউরোপে আদিম মানুষের অস্তিত্বের এমন প্রত্যক্ষ প্রমাণ এর আগে মেলেনি। পাথরের অস্ত্র, হাড়গোড় এই যা পাওয়া গিয়েছিল।
সম্প্রতি সন্ধান মেলে পায়ের ছাপ-সহ নরফকের ওই অঞ্চলটির। জোয়ারের জল এগিয়ে আসায় বেশ ক্ষতিগ্রস্তও হচ্ছে চিহ্নগুলি। তার মধ্যে আবার লাগাতার ঝড়বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত ব্রিটেন। ব্রিটিশ মিউজিয়ামের নিক অ্যাশটন বলেন, “এই আবিষ্কার আমাদের ব্রিটেন কিংবা ইউরোপের ইতিহাস নতুন করে ভাবতে শেখাচ্ছে।” অ্যাশটন এক সহকর্মীর সঙ্গে নদীর তীরে হাঁটতে বেরিয়ে ছিলেন। তখনই চোখে পড়ে তাঁদের। জানালেন, বেশ কয়েকটা ছাপে গোড়ালি, পায়ের পাতা স্পষ্ট।
ন্যাশনাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের গবেষক ক্রিস স্ট্রিঞ্জারের মতে, ওই চিহ্নগুলি যাদের, তারা স্পেনে বসবাসকারী আদিম মানুষদের জাতভাই হোমো অ্যান্টেসেসর। তাদের বিবর্তনের পরে এসেছিল হোমো হেডেলবেরজেনসিস। আর তাদের সরিয়ে চার লক্ষ বছর আগে আসে নিয়ানডারথ্যাল। তারাও বিলুপ্ত হয়ে যায় আজ থেকে ৩৫ হাজার বছর আগে। রাজত্ব শুরু করে আধুনিক মানুষ।