image_50001.potatoবাংলাদেশে আলুর দাম মারাত্মকভাবে কমে যাওয়ায় কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। পাইকারি বাজারে কৃষকরা গড়ে প্রতিকেজি আলু বিক্রি করছেন মাত্র ১ থেকে ২ টাকা দরে, যেখানে তাদের উৎপাদন খরচই রয়েছে ৫ থেকে ৬ টাকা। এ বিষয়ে এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বিবিসি বাংলা।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, অতিরিক্ত সরবরাহের কারণেই আলুর বাজারদর এতটা কমে গেছে, যার ফলে তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। জয়পুরহাটের আলুচাষী খায়রুল ইসলাম এ মৌসুমে প্রতি বিঘায় ১০,০০০ টাকারও বেশি খরচ করে আলুচাষ করেছেন। কিন্তু বিক্রি করতে গিয়ে তিনি পরিবহণ খরচ বাদ দিয়ে মণপ্রতি দাম পেয়েছেন মাত্র ৪২ টাকা। অর্থাৎ, কেজিপ্রতি ১ টাকার চেয়ে সামান্য বেশি।
আলুচাষি ইসলাম বলেন, কেজিপ্রতি প্রায় ৪ থেকে ৫ টাকা খরচ করে এবছর বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে তাকে। তিনি বলেন, ‘এই এলাকায় যারা আলু আবাদ করছে, সবার এখন মাথায় হাত। আলু বাজার পর্যন্ত নেওয়ার খরচ করে আর কিছুই থাকে না।’ তার মতে সারা বাংলাদেশে আলুচাষিদেরই একই অবস্থা।
মুন্সীগঞ্জ, জয়পুরহাটসহ বাংলাদেশের বেশ কয়েকটি জেলায় প্রচুর পরিমাণে আলুর চাষ হয়। আর কৃষি বিভাগের হিসেবে, প্রতি বছর আলু চাষ করেন প্রায় ৮০ লাখ কৃষক। যাদের প্রায় সবাই এবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কৃষকদের মতো পাইকারি ব্যবসায়ীরাও বলছেন, এত কম দামে আলু কিনে তারাও লোকসানে পড়ছেন।
প্রতিমণ আলু ৭০ থেকে ৮০ টাকা দামে কিনে ঢাকার পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করছেন ৩০০ থেকে ৩৫০ দামে। পরিবহন খরচসহ তাদের মোট যে খরচ হচ্ছে, তাতে বিপুল পরিমাণ লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদেরও।
জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ বাজারের একজন ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন বলছিলেন, গতবছর গড়ে প্রায় একহাজার টাকা মণে আলু কিনেছিলেন তিনি এবং লাভও হয়েছিল। কিন্তু এবছর সরবরাহ বেশী থাকায় নূন্যতম দামে আলু কিনেও তারা লোকসানে পড়ছেন। মাঝখানে দুই মাস হরতাল-অবরোধের কারণে অনেক কৃষক ফসল ওঠায়নি। এখন সরবরাহ হয়ে গেছে বেশী আর দাম হয়ে গেছে কম।
আলুর দামের এ বেহাল অবস্থার কারণে ক্ষুব্ধ কৃষকরা প্রতিবাদও করেছেন। দিনাজপুরে রাস্তায় আলু ফেলে রাস্তা অবরোধও করেছেন তারা। তবে সরকার যেহেতু আলু মজুদ করে না, সেহেতু আলুর দাম নিয়ন্ত্রণে সরকারের সরাসরি ভূমিকাও নেই। সংসদে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীও এ মু্হূর্তে আলুতে ভর্তুকি দেবার সম্ভাবনাও নাকচ করে দিয়েছেন।