মাথায় হিজাব। চোখে অল্প পাওয়ারের চশমা। প্রথম দেখায় চেনার কোনো উপায় নেই। একটু ভালো করে লক্ষ করতেই চেনা গেল। নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা শাবনাজ। অভিনয় করেছেন চাঁদনি, জিদ, লাভ, সাক্ষাত্, আশা-ভালোবাসা, আঞ্জুমান, মায়ের অধিকার, জজ-ব্যারিস্টার, অনুতপ্তর মতো অনেক জনপ্রিয় সিনেমায়। শাবনাজ গতকাল বিকেলে এসেছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে। অ্যাস্ট্রো টার্ফের পাশে বসে মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখলেন ফুটবল ম্যাচ। পাশেই বসা ছিল মেয়ে নামিরা।
যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সম্পর্ক বিনিময় কর্মসূচির অংশ হিসেবে ঢাকায় এসেছেন টনি সান্নেহ ও লিন্ডা হ্যামিলটন। যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দুই ফুটবলার ঢাকায় চার দিনের একটি ক্লিনিক কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসেছেন বাংলাদেশে। গতকাল বাফুফের অ্যাস্ট্রো টার্ফে কর্মসূচির শেষ আনুষ্ঠানিকতার অংশ হিসেবে খেললেন দুটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ। মূলত ওই ম্যাচ দেখতেই ফুটবল ফেডারেশনের আমন্ত্রণে এসেছিলেন চিত্রনায়িকা শাবনাজ।
ফুটবলের সঙ্গে সখ্য শাবনাজের অনেক পুরোনোই। বাংলা সিনেমায় জুটি বেঁধে একসময় অভিনয় করতেন স্বামী চিত্রনায়ক নাঈমের সঙ্গে। দুজনের এই জুটি অনেক জনপ্রিয় হয়েছিল। অনুতপ্ত সিনেমায় নায়ক নাঈম ছিলেন ফুটবলার। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে মোহামেডান-আরামবাগ ম্যাচ শেষে ফ্লাডলাইটের আলোয় শুটিং হয়েছিল ওই সিনেমার। সেখানে অভিনয় করেছিলেন সাবেক জাতীয় দলের ফুটবলার আশরাফউদ্দিন চুন্নু। কাল ফুটবল মাঠে এসে শাবনাজ পুরোনো দিনের স্মৃতিচারণা করছিলেন, ‘ফুটবল খেলা সব সময় আমার ভালো লাগে। ফুটবল খেলার কাহিনি নিয়ে তৈরি সিনেমা অনুতপ্ততে অভিনয় করেছিলাম। ওই ছবির শুটিং করতে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে গিয়েছিলাম। অনেক মজা করেছিলাম ছবিটা করতে গিয়ে।’
মেয়ে নামিরা নাঈমকেও ফুটবলে নিয়ে এসেছেন। মেয়েদের স্কুল ফুটবলে নিয়মিতই খেলে উত্তরা আগা খান স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী। মায়ের এই তুমুল জনপ্রিয়তা দেখে বেশ অবাকই হচ্ছিল নামিরা।
ইদানীং সিনেমায় অভিনয়ে অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন শাবনাজ। এখন আর অভিনয় তাঁকে টানে না বলেই জানালেন, ‘আগের মতো পরিবেশ নেই সিনেমায় অভিনয় করার। এখন ভালো পরিচালক, কাহিনিকার সবকিছুরই অভাব। শুধুই প্রেমের ছবিতে অভিনয় করতে করতে একঘেয়ে লাগত একসময়। কোনো বৈচিত্র্য পাইনি।’ তবে বদ-সুরত সিনেমায় ইলিয়াস কাঞ্চনের সঙ্গে অভিনয় করে ভালো লেগেছিল, ‘ওই ছবির গল্পটাই ছিল অন্য রকম। এজন্য ছবিতে কাজ করে মজা পেয়েছিলাম।’ তবে অনন্ত জলিলের এই শিল্পকে বাঁচানোর নতুন উদ্যোগকে বেশ সাধুবাদ জানালেন।
মাঝে কিছুদিন টেলিভিশন নাটকে কাজ করেছিলেন। কিন্তু এখন সেটাও ছেড়ে দিয়েছেন। তা হলে সময় কাটে কীভাবে? ‘মেয়েকে সকালে স্কুলে নিয়ে যাই। এরপর বাসায় ফিরে টুকটাক ঘরকন্নার কাজ করি। অবসরে বই পড়ি। রান্নাবান্না করি। সময়টা ভালোই কেটে যায়।’—বলছিলেন শাবনাজ। স্বামী নাঈমও ব্যবসা নিয়ে ব্যস্ত। দুজনে মিলে একটি ভালো সিনেমা তৈরির ইচ্ছার কথাও জানালেন।
টার্ফের একপাশে চলছিল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান। কিন্তু মাঠে আসা দর্শকদের বেশির ভাগই অন্য পাশে ঘিরে থাকলেন শাবনাজকে। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনাকে বাদ দিয়ে সব আলো ঘিরে থাকল তাঁর ওপরই। পাশে দাঁড়ানো নামিরা বেশ উপভোগই করছিল মায়ের জনপ্রিয়তার ব্যাপারটি। তুমি কি মায়ের অভিনীত সিনেমা দেখ? নামিরাকে জিজ্ঞাসা করতেই লজ্জায় মায়ের আঁচলে মুখ লুকাল। তার হয়ে উত্তর দিলেন শাবনাজ, ‘আমার দুই মেয়ের কেউই ছবি দেখে না। ওরা খেলতেই ভালোবাসে। ছোটোবেলায় টেলিভিশনে আমার সিনেমা দেখলে কান্নাকাটি শুরু করে দিত।’ কারণটাও বললেন পরে, ‘যখন ভিলেন আমাকে তাড়া করত বা কোনো মারামারির দৃশ্যে আমাকে মার খেতে দেখত, ওরা ভাবতো হয়তো সত্যি সত্যিই আমি মার খাচ্ছি। আমার কান্নার দৃশ্য দেখলেই ওরা কাঁদতে শুরু করত। এখন সব বোঝে ওরা। কিন্তু সিনেমায় মোটেও আগ্রহ নেই ওদের। আগ্রহ সব খেলায়।’
অ্যাস্ট্রো টার্ফে নয়, শাবনাজের মেয়ে নামিরা একদিন খেলবে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে। খেলবে বাংলাদেশের জার্সি গায়ে। স্বপ্নটা সত্যি হলে মন্দ কি।