bangladesh-will-raise-the-minimum-wage-for-garment-workers

নিউ ইয়র্কভিত্তিক প্রভাবশালী আন্তর্জাাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার সংস্থাটির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই আহ্বান জানানো হয়।

হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করা থেকে বিরত রাখার জন্য তৈরিপোশাক কারখানার মালিকদের ভীতিপ্রদর্শন এবং হুমকি প্রদান বন্ধে এবং শ্রমিকনেতাদের ওপর হামলাকারীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন। এছাড়া আমেরিকা এবং ইউরোপের খুচরা বিক্রেতাদের উচিত তাদের বাংলাদেশী সরবরাহকারীরা যাতে শ্রম অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে তা নিশ্চিত করা।

প্রতিবেদনে বলা হয়, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ঢাকা এবং আশপাশের ২১টি কারখানার ৪৭ জন শ্রমিকের সাক্ষাৎকার নিয়েছে। শ্রমিকেরা দাবি করেছেন, ট্রেড ইউনিয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কারণে বেশ কয়েকজন ব্যবস্থাপক সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্মীদেরকে ভীতি প্রদর্শন করেছেন, তাদের সঙ্গে অসদাচরণ করেছেন এবং এমনকি তাদের হত্যা করারও হুমকি দিয়েছেন। কয়েকজন ইউনিয়ন সংগঠক জানিয়েছেন, তাদেরকে পেটানো হয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, তারা চাকরি হারিয়েছেন বা পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন। তারা জানিয়েছেন, অনেক সময় কারখানা মালিকেরা কর্মস্থলের বাইরে এমনকি তাদের বাড়িঘরেও শ্রমিকদের ওপর হামলা চালানো বা আক্রমণ করার জন্য স্থানীয় সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করেন।

রানা প্লাজা ধ্বসের ঘটনায় ১১ শতাধিক পোশাকশ্রমিক নিহত হওয়ার জের ধরে প্রবল সমালোচনার মুখে পড়ে বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালের জুলাই মাসে শ্রম আইন সংশোধন করে। এর আগে শ্রম মন্ত্রণালয় মুষ্টিমেয় ইউনিয়ন গঠনের অনুমতি দিয়েছিল। এই সংশোধনীটির মাধ্যমে ইউনিয়ন গঠন সহজ হয়ে গিয়েছে। সংশোধনীর পর কারখানা পর্যায়ে অর্ধশতাধিক ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠিতও হয়েছে। কিন্তু এই আইনে বলা হয়েছে, ইউনিয়নের নিবন্ধন পেতে হলে সংশ্লিষ্ট কারখানার ৩০ ভাগ শ্রমিকের সমর্থন পেতে হবে।  কিন্তু নিয়োগকারীদের হুমকি এবং ভীতি প্রদর্শনের ফলে বর্তমানে এই সমর্থন পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের এশিয়া পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বলেন, ভবিষ্যতে রানা প্লাজা বিপর্যয়ের মতো বড় ধরনের বিপর্যয় এড়ানো এবং বাংলাদেশের শ্রমিকদের শোষণ প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে শ্রমিকদের অধিকার পর্যবেক্ষণ ও তাদের প্রতিকূল পরিস্থিতি সুরাহার জন্য স্বাধীনভাবে তাদেরকে ট্রেড ইউনিয়ন প্রতিষ্ঠায় উৎসাহ দেয়া। এমনিতেই বাংলাদেশ সরকার বিলম্বে ইউনিয়নের নিবন্ধন দিতে শুরু করেছে। এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি পদক্ষেপ এবং বাংলাদেশের শ্রমিকদের স্বার্থরক্ষার জন্য সেদেশে এটাই প্রথম পদক্ষেপ। তাই এখন কারখানা মালিকদের হাতে ইউনিয়ন নেতাদের নিপীড়ন বন্ধ করা এবং তাদেরকে যথাথযভাবে কাজ করতে দেয়া নিশ্চিত করতে হবে।

মানবাধিকার সংগঠনটির প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, বর্তমানে বাংলাদেশের পাঁচ সহস্রাধিক পোশাক কারখানায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিত কতে হবে। এছাড়া কর্মস্থলে শ্রমিকদের নিরাপত্তাও নিশ্চিত করতে হবে। এই লক্ষ্যে আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন যৌথভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু দেশটির সরকার এবং বাংলাদেশের পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’কেও দেশটিতে শ্রম আইনের যথাযথ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে, আর যে সব প্রতিষ্ঠান শ্রমিকদের অধিকার লঙ্ঘন করেছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।