গাজীপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপি’র দু’গ্রুপের সংঘর্ষে এক ওয়ার্ড বিএনপি’র সভাপতিকে পিটিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষরা। এসময় আহত হয়েছেন অন্ততঃ ৭জন। শুক্রবার কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের নাশু মার্কেট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার পরই সাবেক চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শরিফুল ইসলাম তোরণের অফিস ও বাড়ীতে হামলা এবং ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।

নিহত এমদাদুল হক আকলু (৬৫) কালীগঞ্জ উপজেলার মোক্তারপুর ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে এবং ৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি।

আহতরা হলো, রাথুরা গ্রামের জসিম উদ্দিনের ছেলে জহিরুল ইসলাম (৩৫), ফাইজ উদ্দিন শেখের ছেলে মঞ্জু শেখ (৬৫), রামচন্দ্রপুর গ্রামের ইসমাইল শিকদারের ছেলে সীমান্ত শিকদার ঈমন (২৪) এবং বজলুর সরকারের ছেলে মেহিদী হাসান সরকার (৩১)। তাদের মধ্যে মেহেদী ও ঈমন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসাপাতাল থেকে চলে গেলে এবং জহিরুল ও মঞ্জু শেখকে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রাখা হয়েেেছ।

নিহতের স্বজন, পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গাজীপুর-৫ (কালীগঞ্জ) আসনে স্বতন্ত্রপ্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ডাকসু’র সাবেক ভিপি ও জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আখতারউজ্জামান ট্রাক প্রতীক নিয়ে এবং আওয়ামী লীগ মনোনীত সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। এসময় সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম তোরুণের নেতৃত্বে ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি এমদাদুল হক আকলু গ্রুপের কর্মী সমর্থকরা আক্তারুজ্জামানকে (ট্রাক) এবং ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নূর মোহাম্মদ গ্রুপের নেতা-কর্মীরা আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেহের আফরোজ চুমকিকে (নৌকা) সমর্থন দিয়ে নির্বাচনী প্রচার চালায়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলে আসছিল। সম্প্রতি আকলু গ্রুপের লোকজন নূর মোহাম্মদ গ্রুপকে আওয়ামী লীগের দালাল আখ্যা দিয়ে এলাকায় প্রচারণা চালায়। এতে দুই পক্ষের মাঝে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। সম্প্রতি ক্ষমতার পালা বদলের পর এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ওই দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিলো।

তারা আরো জানান, শুক্রবার সকাল ১০টার দিকে আকলুর নেতৃত্বে স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ৮-১০টি মোটরসাইকেল নিয়ে এলাকায় মিছিল নিয়ে মহড়া দেয়। একপর্যায়ে তারা নাশু মার্কেট এলাকায় অবস্থান নিলে নূর মোহাম্মদ গ্রুপের প্রায় ৪০-৫০ জন নারী-পুরুষ মিলে তাদের ধাওয়া করে। সেসময় নূর মোহাম্মদ গ্রুপের লোকজন আকলুসহ ৭/৮ জনকে আটক করে মারধর করে। তাদের বেধড়ক পিটুনিতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন আকলু। খবর পেয়ে দুপুরে ঘটনাস্থল থেকে নিহতের লাশ উদ্ধার করে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করে কালীগঞ্জ থানা পুলিশ। আহতদের মধ্যে জহিরুল, মনজু শেখ, ইমন ও মেহেদীকে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনার পর দুপুর ১২টার দিকে স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীরা সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শফিকুল ইসলাম তোরণের বাড়িতে ও অফিসে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে।

কালিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বাবলু মিয়া ও মুক্তারপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক বাগমার নয়ন জানান, নাশু মার্কেট এলাকায় অবস্থান নিলে উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি শরিফুল ইসলাম তোরণ এবং সবুর মেম্বারের নেতৃত্বে আওয়ামীলীগের লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে ইমদাদুল হক ও তার লোকজনের উপর হামলা চালায়। এসময় হামলাকারীরা পিটিয়ে ইমদাদুলকে হত্যা ও অপর কয়েকজনকে আহত করে।

গাজীপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) নাজমুস সাকিব খান বলেন, নিহতের শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে হত্যাকান্ডের ঘটনাটি ঘটেছে বলে প্রাথমিক ভাবে জানা গেছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি। এঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।