জনগণের সমর্থন নিয়ে বিএনপি আগামীতে জাতীয় সরকারব্যবস্থায় দেশ পরিচালনা ও সংবিধানে দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট সংযুক্ত দেখতে চান বলে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

ধারাবাহিক মতবিনিময় কর্মসূচির অংশ হিসেবে শেষ পর্বে আজ বুধবার ঢাকা বিভাগে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তারেক রহমান এ কথা বলেন।এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও ড. আবদুল মঈন খান।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘আমাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ সংষ্কার পরিকল্পনার কথা দেশবাসীকে জানানো প্রয়োজন মনে করছি। দেশে প্রথাগত রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নন কিন্তু দেশ গঠন, উন্নয়ন ও পরিচালনায় অংশগ্রহণ করতে চান—এমন অসংখ্য জ্ঞানী-গুণী শিক্ষক, শিল্পী-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, চিকিৎসক, কারিগরি বিশেষজ্ঞ, মানবতাকর্মী রয়েছেন। কিন্তু বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোতে তাদের পক্ষে সংসদে সদস্য হিসেবে অবদান রাখার সুযোগ নেই। তাদের সেবা আর অবদান দেশের কাজে লাগাতে বিএনপি পৃথিবীর অনেক দেশের মতো আমাদের দেশেও উচ্চ কক্ষসহ দ্বিকক্ষ বিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থা সংবিধানে সংযুক্ত দেখতে চায়।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমরা দেখেছি দলীয় সরকারে কীভাবে একটি দলের লোকজন বিচরণ করে সর্বত্র, আর অন্য সবার অবস্থান হয়ে পড়ে তুচ্ছ আর গৌণ। ফলে একটা বিশাল জনগোষ্ঠীর সেবা থেকে দেশ বঞ্চিত হয়।’

তারেক রহমান বলেন, ‘স্বাধীনতার পরপর জাতীয় ঐক্যের শক্তিকে ব্যবহার না করে যে সুযোগ সেদিন হাতছাড়া করা হয়েছে, আগামী দিনে আমরা সেটার পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। জনগণের সমর্থন নিয়ে বিএনপি আগামীতে জাতীয় সরকারের মাধ্যমে দেশ পরিচালনা দেখতে চায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের পূর্বসূরীরা রণাঙ্গনে যুদ্ধ করে একটা স্বাধীন দেশ আমাদের দিয়েছেন। এই যুদ্ধ জয়ের মূল শক্তি ছিল প্রশ্নহীন জাতীয় ঐক্য। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, স্বাধীনতার পর আমরা সেই ঐক্যের শক্তিকে কাজে লাগাতে পারিনি। অত্যাবশ্যকীয় একটা জাতীয় সরকারের পরিবর্তে আওয়ামী লীগের দলীয় সরকার ক্ষমতায় আসায় দেশ বিভক্ত হয়ে পড়েছে প্রথম দিন থেকেই। ফলে একটা বিরাট অংশ ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও দেশ গঠন কোনো অবদান রাখতে পারেনি।’

তারেক রহমান বলেন, ‘এ দেশের মানুষের জন্য গণতন্ত্র আর ভোটাধিকার পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে যারা অংশ গ্রহণ করেছেন, তারা সকলে আগামীতে দেশ পরিচালনায় অংশগ্রহণ করবেন, যাতে দেশ তাদের অবদানের সুফল থেকে বঞ্চিত না হয়।’

গত ১৭ বছরের বিরামহীন আন্দোলনে বিএনপির সব পর্যায়ের নেতাকর্মীর অংশগ্রহণ ও দলের প্রতি তাদের অবিচল আস্থার জন্য তারেক রহমান সবাইকে

অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘আপনার আত্মত্যাগ আর অবদান মুষ্টিমেয় হঠকারীর অপকর্মে ক্ষতিগ্রস্ত হতে কেন দেবেন? সতর্ক থাকুন, সচেতন হোন, প্রতিরোধ করুন।’

সাম্প্রতিককালে গজিয়ে ওঠা অদৃশ্য প্রতিপক্ষের মোকাবিলায় নিজ রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আর কৌশল প্রয়োগের নির্দেশ দেন তারেক রহমান।

সবশেষ তৃণমূলের প্রতি অগাধ আস্থা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘দলের সকল সংকটকালে তৃণমূলই বিএনপিকে বারবার রক্ষা করেছে। এমপি মন্ত্রী পদ-পদবির প্রত্যাশা না করা নিবেদিত প্রাণ কর্মীদল—যারা শহীদ জিয়া, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আর বিএনপির আদর্শের প্রতি যে অবিচল আস্থা বরাবর রেখেছেন; সেটা অব্যহত থাকলে দল হিসাবে বিএনপির সফলতা আর অগ্রযাত্রা কখনোই ব্যাহত হবে না।’