বিএনপি ১৭ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে। এদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দণ্ডিত হয়ে ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে বসবাস করছেন। তার মা বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া সাজা পাওয়ায় তাকে কারাগারে রাখা হয়। অসুস্থ হলে পরে বাসায় থাকার অনুমতি দেওয়া হলেও বিদেশে চিকিৎসা নেওয়া ব্যবস্থা করা হয়নি।

গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের রাজনীতিতে আমূল পরিবর্তন আসে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালাতে বাধ্য হন। ৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনুসে নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়।

দেশের এ পরির্বতনের মধ্যে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন। বিএনপির সঙ্গে অতীতের যাবতীয় দ্বন্দ্ব মিটিয়ে ফেলতে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাম্প্রতিক আহ্বান এবং বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আবারও হাওয়া ভবন ফিরে আসবে কিনা এসব জটিল প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব।

জয়ের আহ্বানের বিষয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল সবসময় গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। সরকার পতনের পর চেয়ারপারসনও বলেছেন- আমরা প্রতিশোধ, প্রতিহিংসার রাজনীতি করতে চাই না। আমরা সৌহার্দ্য, ভালোবাসা এবং সুসম্পর্কের রাজনীতি করতে চাই। কিন্তু একই সময়ে জনগণের কাছে জবাবদিহি একটা বড় বিষয়। আমরা যে কাজগুলো করেছি জনগণ তো তার জন্য আমাদের বিচার করবে। আজকে আওয়ামী লীগকে তার গত ১৫ বছরের কর্মকাণ্ডের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। দেশের রাজনীতি, অর্থনীতিকে কীভাবে তারা ধ্বংস করেছে, তার জন্য তাকে তো জবাবদিহি করতে হবে। তারা জবাবদিহি করে গণতান্ত্রিকভাবে রাজনীতি করলে আমাদের তো কোনো আপত্তি নেই। আমরা বিশ্বাস করি- যেকোনো দলের যে কোনো ব্যক্তির রাজনীতি করার অধিকার আছে, সেভাবে করবে।

আপনারা ক্ষমতায় গেলে হাওয়া ভবন ফিরে আসবে না এই নিশ্চয়তা কোথায়—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই ন্যারেশনটা কতগুলো মিডিয়া এবং ব্যক্তি প্রচার করেন। এটার একমাত্র লক্ষ্য দেশের বৃহত্তম রাজনৈতিক দল বিএনপিকে হেয় এবং নেতৃত্বকে হেয় করা, নেতৃত্বকে দুর্বল করার জন্য। বিএনপি কখনো মানুষের বিপক্ষে কিছু করেনি। দেশ চালাতে গেলে কিছু ভুল হয়, কিন্তু সেই ভুল দেশ ও মানুষকে ক্ষতি করেনি। মিডিয়ার যে স্বাধীনতা সেটা বিএনপি দিয়েছে, সংসদীয় গণতন্ত্র, মুক্তবাজার অর্থনীতি সেটা বিএনপি দিয়েছে। গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ দেশকে ফোকলা করে দিয়েছে। সেই বিষয়কে গুরুত্ব না দিয়ে তখনকার হাওয়া ভবনের কথা বলেন, আয়না ঘরের সঙ্গে তাকে তুলনা করা হয়। হাওয়া ভবন একটা ব্যক্তিগত অফিস ছিল, যা দেশের অর্থনীতি, রাজনীতির কোনো ক্ষতি করেনি। এ নিয়ে একটা প্রজেকশন করার চেষ্টা করা হয়। এটা একটা ষড়যন্ত্র। একটা দলকে হেয় করার জন্য, তার অর্জনকে খাটো করার জন্য। নির্বাচন হোক- তাহলে জনগণই বেছে নেবে কোন দলটা ভালো কোন দলটা ভালো না, কোন নেতা খারাপ, নির্বাচনেই প্রমাণ হবে। কিন্তু চাপিয়ে দেওয়া- এটা করলে ভালো হবে, ওটা করলে ভালো হবে- সেটা নির্বাচনের মাধ্যমেই ঠিক হোক।

মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচনে যে আসবে তাকে গ্রহণ করতে হবে। আমাদের আমলে আমরা এমন কোনো আইন করেছি, যে আইন গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে গেছে? পারবেন না দেখাতে। আওয়ামী লীগের করা সব আইনই গণতন্ত্রের বিপক্ষে গেছে। আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির তুলনা করলে সেটা গ্রস ইনজাস্টিস হবে। আওয়ামী লীগ দেশকে ধ্বংস করে দিয়েছে। আমাদের স্বাধীনতার চেতনা, অর্থনীতি, রাজনীতি, মূল্যবোধ সব ধ্বংস করেছে। একজন বিচারপতিকে মানুষ মারছে, আদালতের মধ্যে অত্যন্ত শ্রদ্ধেয় নেতাদের ডিম ছুড়ছে কারণ মানুষের মধ্যে পুঞ্জিভূত ক্ষোভ। বিএনপি আর আওয়ামী লীগকে এক পাল্লায় মাপলে হবে না। বিএনপি দেশে সবচাইতে ভালোটা করার চেষ্টা করেছে। আওয়ামী লীগ একদলীয় বাকশাল করেছিল, আমরা বহুদলীয় গণতন্ত্র দিয়েছি। আওয়ামী লীগ সব পত্র-পত্রিকা বন্ধ করে দিয়েছিল, আমরা সব চ্যানেল-পত্রিকা চালু করেছি। হাওয়া ভবনে কাউকে আটকে রাখা হয়েছে, কাউকে নির্যাতন করা হয়েছে? একটা প্রমাণ দিন। সুতরাং বিএনপিকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে তুলনা করাটা ‘ইনজাস্টিস টু আস’।