বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকার সাভারে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গেছে আন্দোলনকারী এক শিক্ষার্থী। এতে অন্তত ১০ জন গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে দেড় শতাধিক।

তাৎক্ষণিকভাবে নিহতের পরিচয় জানা যায়নি। তবে পকেটে থাকা অস্পষ্ট একটি আইডি কার্ডের ফিতায় মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির (এমআইএসটি) ফিতা পাওয়া গেছে।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে ৩টার দিকে একটি অটোরিকশায় করে গুলিবিদ্ধ গুরুতর আহত এক শিক্ষার্থীকে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসকমিজারুল রেহান পাভেল ও ডা. হাসান মাহবুব ওই যুবকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তারা জানান, শিক্ষার্থীর বুকে অসংখ্য গুলির কারণেই মৃত্যু হয়েছে। এর আগে আজ দুপুরে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির অংশ হিসেবে সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। সেখানে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন বেশ কয়েকজন। গুলিবিদ্ধ আহতদের মধ্যে শিক্ষার্থী ছাড়াও দোকান কর্মচারী ও পথচারী রয়েছেন।

দুপুরে আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস অভিমুখে এগোলে বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে থেমে থেমে সংঘর্ষে জড়ায় পুলিশ। তাদের সঙ্গে যোগ দেয় ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

শিক্ষার্থীদের একটি অংশ পাকিজা অতিক্রম করে সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড ধরে ক্যাম্পাসের দিকে অগ্রসর হলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও পুলিশের সংঘর্ষে চার শিক্ষার্থী, সাংবাদিক গুলিবিদ্ধসহ শতাধিক আহত হওয়ার ঘটনায় থমথমে গোটা ক্যাম্পাস।

সকাল থেকেই উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে মোবাইল ইন্টারনেট ছিল বন্ধ। গতি কমিয়ে দেওয়া হয় ব্রডব্যান্ড লাইনের। দুপুরে পুলিশের বাধা পেয়ে শিক্ষার্থীরা সড়কের মধ্যে আগুন ধরিয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। এ সময় পুলিশ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের থেমে থেমে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় রণক্ষেত্রে পরিণত হয় সাভার বাজার বাসস্ট্যান্ড।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড ও টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করেও পরিস্থিতি শান্ত করতে পারেনি। থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছে। এভাবে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে সাভারের শিমুলতলা, রেডিও কলোনি ও ব্যাংক কলোনি এলাকায়।

পৌনে ৩টার দিকে একে একে গুলিবিদ্ধদের নেওয়া হয় সাভারে এনাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে আহত শিক্ষার্থী, পথচারী ও উৎসক জনতার ভিড়ে চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে দেখা যায় কর্তব্যরত চিকিৎসকদের।

এ বিষয়ে পুলিশের দায়িত্বশীল কেউ কোনো মন্তব্য করতে চাননি। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত সাভারে থেমে থেমে সংঘর্ষ চলছে।