আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গাজায় গণহত্যার মামলা ভুল প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে ইসরায়েল। শুক্রবার (১২ জানুয়ারি) নেদারল্যান্ডসের হেগে আদালতে গাজায় গণহত্যা মামলার শুনানির শেষদিন এমন দাবি করেন দক্ষিণ আফ্রিকার বিচারমন্ত্রী রোনাল্ড লামোলা।

শুক্রবার পাল্টা বক্তব্য ও যুক্তি উপস্থাপন করেন ইসরায়েলি আইনজীবীরা। শুনানি শেষে এক সংবাদ সম্মেলনে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়া রোনাল্ড লামোলা বলেন, ফিলিস্তিন ও গাজার বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্য থেকে কিছু ব্যক্তি যাই করুক না কেন ও ইসরায়েলি নাগরিকদের উপর যত বড় হুমকিই থাক না কেন, গত বছরের ৭ অক্টোবরের পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় যে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে তা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি আরও বলেন, গোটা গাজায় গণহত্যার লক্ষ্যে আক্রমণ চালানো হয়েছে। কতিপয় ব্যক্তিদের জন্য গাজার সব বাসিন্দাদের নিধন করার পরিকল্পনা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। আমরা অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী যে আমাদের হাতে যেসব সত্য সত্য-প্রমাণ রয়েছে, সেগুলোর মাধ্যমে ইসরায়েল যে গণহত্যার অপরাধ করেছে তা প্রমাণ সম্ভব হবে।

জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে মামলাটি করে দক্ষিণ আফ্রিকা। গত বৃহস্পতিবার (১১ জানুয়ারি) মামলার শুনানি শুরু হয়। শুনানিতে দক্ষিণ আফ্রিকার আইনজীবীরা বলেন, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান একটি রাষ্ট্র-পরিচালিত গণহত্যার অভিযান। ইসরায়েলের এই অভিযানের লক্ষ্য ফিলিস্তিনি জনগণকে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা।

পাল্টা বক্তব্য ও যুক্তি উপস্থাপনকালে গাজায় গণহত্যার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে ইসরায়েল। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধে দক্ষিণ আফ্রিকার অনুরোধ খারিজ করার জন্য বিচারকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েল। তাদের দাবি, অভিযান বন্ধ হলে গাজাবাসী নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে।

এছাড়া গণহত্যা কনভেনশনের অধীনে গাজা উপত্যকায় সামরিক অভিযান বন্ধের আদেশ দেওয়ার এখতিয়ার আইসিজের নেই বলেও মন্তব্য করেন ইসরায়েলি আইনজীবীরা। ইসরায়েলের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেওয়া আইনজীবী টাল বেকার বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে যেসব ব্যাখ্যা তুলে ধরছে, তা অতিমাত্রায় বিকৃত। যদি কোনো গণহত্যা ঘটে থাকে, তাহলে তা ইসরায়েলের বিরুদ্ধেই হয়েছে। হামাস ইসরায়েলে গণহত্যা চালাতে চায়।

এই ইসরায়েলি আইনজীবীর দাবি, ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে নয়, বরং হামাসের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা যুদ্ধ করছে ইসরায়েল। হামাসের কারণেই ফিলিস্তিনের বেসামরিক নাগরিকদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। আর গণহত্যার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো কোনো জনগোষ্ঠীকে আংশিক বা পুরোপুরি ধ্বংস করা, যা ইসরায়েল করেনি।

আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় ‘জাতি, বর্ণ বা নৃগোষ্ঠী বা ধর্মীয় কোনো সম্প্রদায়কে আংশিক বা পুরোপুরি নিশ্চিহ্ন করার লক্ষ্যে পরিচালিত একটি বা একাধিক কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে’। এসব কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে: কোনো গোষ্ঠীর সদস্যদের হত্যা বা শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি, কোনো গোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিক ধ্বংস করা, কোনো জাতি বা গোষ্ঠীর মধ্যে নতুন জন্ম প্রতিরোধের জন্য কোনো পদক্ষেপ নেওয়া ও জোর করে এক গ্রুপের শিশুদের অন্য গ্রুপে স্থানান্তর করা।

দক্ষিণ আফ্রিকা চায় আইসিজে ইসরায়েলকে অবিলম্বে গাজায় সামরিক অভিযান স্থগিত করার নির্দেশ দিক। কিন্তু এটা অনেকটাই অনিশ্চিত। কারণ এমন কোনো নির্দেশ যে ইসরায়েল খুব সহজে মেনে নেবে তেমনটা মনে হয় না এবং তাদের বাধ্যও করা যাবে না।

আদালতের নির্দেশ সংশ্লিষ্ট দুই পক্ষের জন্য মান্য করার তাত্ত্বিক বাধ্যবাধকতা আছে, কিন্তু বাস্তবে এটির প্রয়োগে বাধ্য করা যায় না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ২০২২ সালে আইসিজে রাশিয়াকে অবিলম্বে ইউক্রেনে সামরিক অভিযান স্থগিত করতে বলেছিল। কিন্তু সেই নির্দেশ উপেক্ষিতই থেকে গেছে। সূত্র: রয়টার্স, বিবিসি