আসন্ন ঈদ উপলক্ষে গরুর হাটের নিরাপত্তা নিয়ে বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, গরুর হাটগুলোতে সার্বক্ষণিকভাবে নিরাপত্তা অটুট থাকবে। কোন কোন সময় দেখা গেছে গরু নিয়ে টানা-হেঁচড়া হয়, চাঁদাবাজীর অভিযোগ আসে। যদি কেউ কোন গরুবাহী/পশুবাহী ট্রাক বা নৌকা যে গন্তব্যে যাবে সেই গন্তব্যের আগে থামাতে চায়, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগভাবে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

তিনি সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজীদের উদ্দেশ্যে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে আরো বলেন, কোন চাঁদাবাজী সন্ত্রাসী অনুগ্রহপূর্বক এ কাজটি করতে যাবেন না, গেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনের যে প্রয়োগ করা দরকার তা করা হবে। এজন্য তিনি ব্যবসায়ি ও ইজারাদার পশুবহনকারী গাড়ির চালকদের উদ্দেশ্যে বলেন, আপনারা এ ধরণের কোন সমস্যার সম্মুখীন হলে নিকটস্থ পুলিশের সহায়তা নেবেন অথবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করবেন। আপনারা আমাদের সহায়তা দিন আমরা আপনাদের সেবায় নিয়োজিত আছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং যাত্রীদের যাতায়ত সুগম করতে বাংলাদেশ পুলিশ আপনাদের পাশে রয়েছে। যেখানেই কোন সমস্যা হবে সেখানেই তার সমাধানের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

আসন্ন ঈদ-উল আযহা উপলক্ষে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক পরিদর্শনে গিয়ে শনিবার দুপুরে গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় পুলিশ বক্সের সামনে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি এসব কথা বলেন।

এরআগে তিনি গাজীপুর চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকায় পৌঁছালে তাকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান গাজীপুরের মহানগর পুলিশ। পরে তিনি গাড়ি চালকদের মাঝে ট্রাফিকিং সংক্রান্ত সচেতনামূলক লিফলেট বিতরণ করেন।

এসময় পুলিশের অতিরিক্ত আইজি (হাইওয়ে) মো. শাহাবুদ্দিন খান, ডিআইজি মো. হায়দার আলী খান, গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোঃ মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার মো. দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা মহানগর পুলিশের এআইজি (মিডিয়া) মো. মঞ্জুর রহমান, গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মো. আলমগীর হোসেন, মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ ও মো. ইব্রাহিম খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, গত ঈদেও হাইওয়ে পুলিশ, রেলওয়ে পুলিশ, নৌপুলিশ, জেলা পুলিশ মেট্রোপলিটন পুলিশ, র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, ইন্ডাস্ট্রিয়াজ পুলিশ, গেয়েন্দা পুলিশ সবাই একযোগে কাজ করেছি। তাতে গত ঈদের ব্যবস্থাপনা সুন্দর ছিল। যাত্রী সাধারণ নির্বিঘেœ যথাসময়ে তাদের গন্তব্যে যেতে পেরেছে এবং তাদের গন্তব্যস্থলেও নিরাপত্তা ব্যবস্থা অটুট ছিল। যাত্রী সাধারণ, দেশের নাগরিকবৃন্দ এবং পর্যটনকেন্দ্রে পর্যটকদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় রেখেছিলাম। এতে গতবারের ঈদের যাতায়ত ব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থা সুন্দর ছিল। গতবারের অভিজ্ঞতা মাথায় রেখে এবারও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজিয়েছি। তবে গত ঈদের চেয়ে এবারের ঈদে চ্যালেঞ্জ একটু বেশি। গতবারের ঈদে কাজ ছিল শুধু যাত্রীসাধারণকে তাদের গন্তব্যে পার করা। এবার একদিকে যাত্রীসাধারণ গন্তব্যে যাবে অন্যদিকে পশুবাহী ট্রাক-নৌকা যাতায়ত করবে রাস্তা-ঘাটে এবং নদীতে। এছাড়াও এ ঈদে মৌসুমী ফলবাহী গাড়িও চলাচল করবে। সেগুলোকেও আটকানো যাবে না। এসব কিছু বিবেচনা করে আমরা দেশবাসীকে আশ^স্ত করতে চাই, সরকার বিভিন্নমুখী ব্যবস্থা নিয়েছে। ইতোমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর দপ্তর, রেলওয়ে মন্ত্রণালয়ে, পুলিশ হেডকোয়ার্টারে, প্রতিটি মহানগর এবং জেলায় পুলিশসহ প্রতিটি জেলার মালিক-শ্রমিক স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আমরা মিটিং করেছি। রাস্তায় সংশ্লিষ্ট ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে মিটিং করেছি। জেলায় জেলায় জেলা প্রশাসকগণও মিটিং করছেন। আমরা সবাই এক সঙ্গে একযোগে কাজ করছি। আশা করছি এবারও সকলের সহযোগিতায় ঈদযাত্রায় সমগ্র যাত্রী সাধারণকে যথাসময়ে নির্বিঘেœ গন্তব্যে পেঁৗঁছাতে সক্ষম হবো। গতবারের চেয়ে এবার মহাসড়কে খান্দা-খন্দকের অবস্থা অনেক ভালো হয়েছে। বিভিন্ন রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন হয়েছে। সরকার রাস্তা-ঘাটের উন্নয়ন এখনও অনেক উন্নয়ন কাজ চলমান আছে। পদ্মা সেতু হয়েছে। যার ফলে যাত্রীরা সাধারণ সময়ে যেভাবে যাতায়ত করে ঈদের সময়ে চেষ্টা করবো তারা যেন সেভাবে স্বাচ্ছন্দে গন্তব্যে যাতায়ত করতে পারেন। সেজন্য আমরা সকলে মিলে কাজ করবো। আমাদের সিনিয়র লেভেলের অফিসার, ডিআইজি, এডিশনাল ডিআইজি, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার লেভেলের কর্মকর্তারা সার্বক্ষণিকভাবে যাত্রী সাধারণের গমন স্বস্তি করতে নিয়োজিত থাকবে।

গাজীপুরের পুলিশ কমিশনার মো. মাহবুবুর রহমান জানান, ঈদ উপলক্ষে মহানগর পুলিশের বিশেষ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এসময় পোশাকে ও সাদা পোশাকে মহানগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সড়ক-মহাসড়কে পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে। তিন পালায় তারা ডিউটি পালন করবেন। বিশেষ করে চান্দনা-চৌরাস্তা, ভোগড়া বাইপাস মোড় এবং টঙ্গীর স্টেশন এলাকায় যানজট ও ছিনতাই প্রবণ এলাকা বিশেষ নজরদারীতে থাকবে। এছাড়া যানজট নিরসনেও নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।

পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন পরে গাজীপুরের চন্দ্রায় এলাকায় ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে পরিদর্শনের উদ্দেশ্যে রওনা হন।