আমাগো কোন কামাই নাই। থাকার কোন জায়গা নাই। কোন জমিজমা নাই। ঘরে খাবার কিছু নাই। আমরা কিভাবে বাঁচবো তার কোন উপায় নাই।’ জীবন যুদ্ধে টিকে থাকার এমনই ব্যাকুল আকুতি ঝড়ে পড়লো মনপুরার ৮ জলদাসের মুখে।গোপাল জলদাস, শ্রী গোবিন্দ জলদাস, গুপী চন্দ্র জলদাস, স্বপন জলদাস, কৃষ্ণা জলদাস, সমর জলদাস, সুমন জলদাস ও মলিন জলদাস। ৮ জন মানুষ ৮ টি পরিবার। অন্যান্য পরিবারগুলোর মতো এদেরও বসতবাড়ি কিংবা বসত ভিটা থাকার কথা ছিলো। কিন্তু না। এদের কোন বসত বাড়ি নেই। বসত ভিটাও নেই। বেঁড়ীবাধের পাশে কোন রকম ছিন্নমূল বসবাস।

এদের সকলের বসতি গড়ার ঠায় হয়েছে মনপুরা উপজেলার ১ নং মনপুরা ইউনিয়নের আন্দির পাড় বেড়ীবাঁধের পাশে। এই ছোট্ট জীবনে পরিবার পরিজন নিয়ে ৬ বার মেঘনার ভাঙ্গনের কবলে পড়তে হয়েছে তাদের। নিজেদের সহায় সম্বল জমিজমা যেটুকু ছিলো তা মেঘনার করাল গ্রাসে বিলীন হয়ে এরা সকলে নিঃস্ব হয়ে গেছে। তাইতো বাধ্য হয়ে বেছে নিতে হয়েছে জেলে জীবন।

৮ টি অসহায় জেলে পরিবারে মোট ২৩ জন পেশাদার জেলে। এদের ছেলে সন্তান নিয়ে এক বেড়িবাঁধ ভাংলে যেতে হয় পরবর্তীতে নির্মিত বেড়িবাঁধে। ছোট ছোট খুঁপড়ি ঘরে কোনমতে কাটিয়ে নিতে হচ্ছে জীবন।বিভিন্ন সময়ে উপজেলার বিভিন্ন চরে ভূমিহীনদের মাঝে বিনামূল্যে জমি বন্দোবস্ত হলেও এদের কপাল ভূমিহীনই রয়ে গেলো। ক্ষমতা আর টাকা পয়সার জোড় না থাকায় এদের কপালে জোটেনা বন্দোবস্তের জমি। সরকারী কলোনীতে থাকার ইচ্ছা স্বত্ত্বেও ঘর বরাদ্দ নিতে গেলে স্থানীয় প্রভাবশালীরা চেয়ে বসেন মোটা অংকের টাকা। কোন উপায় না পেয়ে ওদের ঠিকানা বরাবরের মতো বেড়ীবাঁধের পাশেই রয়ে যায়। ২৩ জেলের মধ্যে নিবন্ধিত জেলে হচ্ছেন ৬ জন। অবরোধকালীন সময়ে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকার কারণে বিকল্প কর্মসংস্থান না জুটায় এরা হয়ে পড়ে পুরোপুরি বেকার। আর এখন যে বেড়ীবাঁধের পাশে এই ৮ জলদাস পরিবার বসতি গেড়েছেন হয়ত কিছুদিনের মধ্যে তা ভেঙ্গে যাওয়ার আতঙ্কে তারা দিশেহারা। এই বাঁধ ভেঙ্গে গেলে তারা কোথায় যাবেন। কত দিনেই বা আবার নতুন বেড়িবাঁধ নির্মাণ হবে এমন হতাশার কথা ঝড়ে পড়ে তাদের মুখে।তাছাড়া এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বসতি স্থানান্তর করতে অনেক খরচ। তাই তারা ফিরতে চায় কোন সরকারী কলোনী বা কোন সরকারী পুণর্বাসন কেন্দ্রে। জানুয়ারী থেকে এপ্রিল পর্যন্ত অবরোধ থাকায় সকলেই বেকার ছিলেন। সামনে বর্ষা মৌসুম। এমতাবস্থা আন্দির পাড় বেড়ীবাঁধটি মেঘনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেলে খোলা আকাশের নিচে থাকা ছাড়া কোন উপায় থাকবেনা অসহায় ৮ জলদাস পরিবারের।