বিশাল এক অর্জনের অপেক্ষায় ছিল বাংলাদেশ। আজ জয় পেলেই কোনো পূর্ণ শক্তির বড় দলের মাঠে সিরিজ জিতত। সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব (এসএসসি) মাঠের নামটাও তাই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে জায়গা করে নিতে পারত অন্যভাবে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। এসএসসির পরীক্ষায় পাশ করতে পারেনি বাংলাদেশ। সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ম্যাচে ৭০ রানে হেরেছে মাশরাফিরা। সিরিজটাও শেষ হয়েছে ১-১ সমতায়।বাংলাদেশ ইনিংসের চার ওভারের মধ্যেই ম্যাচ মুঠোয় পুরে নিল শ্রীলঙ্কা। সাকিব আল হাসান-মেহেদী হাসান মিরাজ লড়াই করলেন, তাতে পরাজয়ের ব্যবধানই কেবল কমলো। বড় হারে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের স্বপ্ন ভাঙলো বাংলাদেশের।

তৃতীয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশকে ৭০ রানে হারিয়ে ১-১-এ সিরিজ ড্র করেছে স্বাগতিকরা। ব্যাটি-বোলিংয়ে এ দিন স্বাগতিকরা ছিল দুর্দান্ত। তেতে থাকা দলটির ফিল্ডিংও গড়ে দিয়েছে ব্যবধান।সিংহলিজ স্পোর্টস ক্লাব মাঠ বা এসএসসিতে উপুল থারাঙ্গা-দানুশকা গুনাথিলাকার ব্যাটে উড়ন্ত সূচনা পাওয়া শ্রীলঙ্কাকে মাঝের ওভারে টানেন কুসল মেন্ডিস। সিরিজে থিসারা পেররার দ্বিতীয় অর্ধশতকে শেষ পর্যন্ত ৯ উইকেটে ২৮০ রান করে শ্রীলঙ্কা।লক্ষ্য তাড়া শুরু হতে না হতেই শেষ বাংলাদেশের জয়ের আশা। প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের পাঁচ জনই যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। ¯্রােতের বিপরীতে অর্ধশতক করা সাকিব-মিরাজের ব্যাটে ৪৪ ওভার ৩ বলে অলআউট হওয়ার আগে ২১০ পর্যন্ত গেল বাংলাদেশ।একটি চার মেরে প্রথম ওভারেই ফিরেন তামিম ইকবাল। বাঁহাতি উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ফিরতি ক্যাচ নুয়ান কুলাসেকারাকে। ডানহাতি পেসারের অফ স্টাম্পের বাইরের বল তাড়া করতে গিয়ে শূন্য রানে বিদায় নেন সাব্বির রহমান।

রানের খাতা খুলতে পারেননি মুশফিকুর রহিমও। প্রথম ওয়ানডেতে ২ বলে ১ রান করা টেস্ট অধিনায়ক বিদায় নেন মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলে। সুরঙ্গা লাকমলের বলে এলবিডব্লিউ হওয়ার পর রিভিউ নিয়েও বাঁচেননি।১১ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশ প্রতিরোধ গড়ে সাকিব-সৌম্যর ব্যাটে। দুই জনে ১১.৪ ওভারে গড়েন ৭৭ রানের জুটি। দলের রান রেট তখন ছয় ছুঁইছুঁই তখনই ভুল করলেন সৌম্য। দিলরুয়ান পেরেরাকে এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে হলেন স্টাম্পড।দুই অঙ্কে যেতে পারেননি মোসাদ্দেক হোসেন ও মাহমুদউল্লাহ। অর্ধশতকে পৌঁছানোর পর বিদায় নেন সাকিব। ৬২ বলে খেলা তার ৫৪ রানের ইনিংসটি গড়া ৭টি চারে। দলের সংগ্রহ দেড়শ পাওয়ার পর সিকুগে প্রসন্নকে ক্যাচ দিয়ে নেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। দলকে দুইশ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার কৃতিত্ব মিরাজের।নিজের তৃতীয় ম্যাচে এসে প্রথমবারের মতো ব্যাটিংয়ের সুযোগ মেলে তরুণ এই অলরাউন্ডার। তার ব্যাটিং থেকেই স্পষ্ট উইকেটে ভয়ের কিছু ছিল না। ১০ নম্বর ব্যাটসম্যান তাসকিন আহমেদ পর্যন্ত খেললেন সহজে।

ওয়ানডেতে নিজের প্রথম ইনিংসে মিরাজ ফিরেন ৫১ রানে। এক বল পর তাসকিনকে বিদায় করে লঙ্কানদের সহজ জয় এনে দেন কুলাসেকারা।প্রথম ওয়ানডের পর দলে আসা কুলাসেকারাই শ্রীলঙ্কার সেরা বোলার। অভিজ্ঞ এই পেসার ৪ উইকেট নেন ৩৭ রানে। দুটি করে উইকেট নেন দিলরুয়ান ও লাকমল। এর আগে এসএসসিতে শনিবার টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই উইকেট হারাতে পারতো শ্রীলঙ্কা। তৃতীয় ওভারে গুনাথিলাকার ফিরতি কঠিন ক্যাচ হাতে জমাতে পারেননি মাশরাফি।

টস জিতে আগে বোলিং করার যে সুবিধা অধিনায়ক নিতে চেয়েছিলেন সেটাও হাতছাড়া হয়ে যায় শুরুর এলোমেলো বোলিংয়ে। ঠিক লাইন-লেংথে বল না করার সুবিধা পুরোপুরি উঠিয়ে নেয় শ্রীলঙ্কা। থারাঙ্গা-গুনাথিলাকার ব্যাটে ১০ ওভারে উঠে ৭৬ রান।গুনাথিলাকাকে ফিরিয়ে লঙ্কানদের উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন মিরাজ। এরপর বেশিদূর যাননি অন্য উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান উপুল থারাঙ্গা। তাসকিনের দারুণ এক বলে এলোমেলো হয়ে যায় তার স্টাম্পস। অবাক করা এক রান আউটে ফিরেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান দিনেশ চান্দিমাল। তাসকিনের থ্রো পেয়ে মুশফিক স্টাম্প ভাঙার সময় ক্রিজের ভেতরেই ছিলেন তিনি। কিন্তু বেলস পড়ার সময় পা ও ব্যাট দুটোই ছিল উঁচুতে।বদলি ফিল্ডার শুভাগত হোম চৌধুরীর থ্রোয়ে রান আউট হয়ে ফিরেন মিলিন্দা সিরিবর্ধনাও। দুই রান আউটের ধাক্কা সামাল দেওয়ার আগেই মেন্ডিসকে হারায় স্বাগতিকরা।মাঝের ওভারগুলোয় শ্রীলঙ্কার রানের চাকা সচল রাখা মেন্ডিস বিদায় নেন মুস্তাফিজুর রহমানের দারুণ এক বলে, মুশফিককে ক্যাচ দিয়ে। ৭৬ বলে খেলা ৫৪ রানের ইনিংসটি গড়া চারটি চারে। চাপ কমানোর চেষ্টায় মাশরাফিকে স্লগ করতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহকে ক্যাচ দেন আসেলা গুনারতেœ।নুয়ান প্রদিপের জায়গায় দলে আসা প্রসন্ন পারেননি ঝড় তুলতে। মুস্তাফিজের স্লোয়ার উড়াতে গিয়ে ফিরেন মাহমুদউল্লাহকে ক্যাচ দিয়ে। হঠাৎ দিক হারানো শ্রীলঙ্কার ত্রাতা থিসারা। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান ফিরে যেতে পারতেন ব্যক্তিগত ২১ রানে। একটুর জন্য ফিরতি ক্যাচের নাগাল পাননি মুস্তাফিজ। ইনিংসের শেষ ওভারে মাশরাফির বলে ফেরার আগে ৪০ বলে চারটি চার ও একটি ছক্কায় ৫২ রান আসে থিসারার ব্যাট থেকে। শেষ ওভারে জোড়া উইকেটসহ ৬৫ রানে ৩ উইকেট নেন অধিনায়ক মাশরাফি। এই ম্যাচে নিজের প্রথম উইকেটে তাকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশের হয়ে ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের তালিকার এককভাবে শীর্ষ উঠে আসেন মাশরাফি। ওয়ানডেতে এখন সাকিবের উইকেট ২২১, দেশের হয়ে মাশরাফির উইকেট ২২৪টি।প্রথম ৩ ওভারে ২৫ রান দেওয়া মুস্তাফিজ পরে নিজেকে কিছুটা ফিরে পান। সব মিলিয়ে ১০ ওভারে ৫৫ রানে নেন ২ উইকেট। অফ স্পিনার মিরাজ ১ উইকেট নেন ৪৯ রানে। টানা দুই ম্যাচে উইকেটশূন্য সাকিব। বোলাররা লক্ষ্যটা তাড়া করার মতোই রেখেছিলেন, কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতায় তার কাছাকাছিও যেতে পারলো না অতিথিরা।