DoinikBarta_দৈনিকবার্তা Pabna-college

দৈনিকবার্তা-পাবনা, ২০ এপ্রিল: জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্মান দ্বিতীয়বর্ষের পরীক্ষার্থীদের কৌশলে জিম্মি করে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে প্রবেশপত্র দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পাবনা সরকারি এডওয়ার্ড কলেজ প্রশাসনের বিরুদ্ধে।অবশ্য শিক্ষকরা দাবী করছেন, ছাত্রনেতাদের সাথে বৈঠকের পর প্রবেশপত্র বিতরণের সময়ে কলেজের সেমিনার, ইনকোর্সসহ নির্ধারিত কিছু ফি নেওয়া হচ্ছে। অথচ এই শিক্ষার্থীরা ফরম পূরণের সময়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও স্থানীয় কলেজের পরীক্ষা সংক্রান্ত সমূদয় টাকা পরিশোধ করেছেন।এদিকে ফরম পূরণের সময়ে ফি কমানোর দাবীতে পরীক্ষার্থীরা আন্দোলনে গেলে অধ্যক্ষ ফি কমানোর আশ্বাস দিয়েও তাদের সাথে একের পর এক প্রতারণা করায় ফুঁসে উঠেছে পুরো কলেজ শিক্ষার্থীরা। অন্যদিকে প্রবেশপত্র দেওয়ার সময়ে অতিরিক্ত যে টাকা আদায় করা হচ্ছে, সে টাকারও কোন রশিদ দেওয়া হচ্ছে না বলেও ভূক্তভোগী পরীক্ষার্থীরা জানান।

একাাধিক শিক্ষার্থীরা সাথে আলাপকালে তারা জানান, সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের ১৮টি বিভাগের সন্মান দ্বিতীয় বর্ষের ফরম পূরণ সম্পন্ন করা হয়েছে। আর ওই সময়েই শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও সরকারি এডওয়ার্ড কলেজের পরীক্ষার সংক্রান্ত সকল ফি আদায় করে নিয়েছে সংশ্লিষ্ট বিভাগ।শিক্ষার্থীরাজানান, আগামী বুধবার থেকে সন্মান দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষা শুরু হবে। ইতোমধ্যে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় প্রবেশপত্র চলে এসেছে সংশ্লিষ্ট কলেজের বিভিন্ন বিভাগে। অথচ এই প্রবেশপত্র পরীক্ষার্থীদের হাতে দেওয়ার সময়ে ১৪০০ টাকা থেকে শুরু করে ১৫৫০ টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত নেওয়া হচ্ছে। কিসের টাকা কেন দিতে হবে পরীক্ষার্থীদের এমন প্রশ্নে সংশ্লিষ্ট বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও শিক্ষকরা সদ্যুত্তর না দিয়ে বাধ্যতামূলক তাদের এই টাকা পরিশোধ করতে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। যে সকল পরীক্ষার্থী এই টাকা পরিশোধ করছেন, শুধুমাত্র তাদেরকেই পরীক্ষার প্রবেশপত্র দেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।

কলেজের একাধিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধানদের সাথে আলাপকালে তারা জানান, দ্বিতীয়বর্ষের পরীক্ষার সময়ে ফরম পুরণের বিশ্ববিদ্যালয়ের ফি ও কলেজের বিভিন্ন ফি একত্রে মোটা অঙ্কের টাকা হওয়ায় পরীক্ষার্থীদের উপর এর চাপ পড়ে। অনেক পরীক্ষার্থী এতো টাকা একসাথে পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ার সঙ্কায় দুই ধাপে এই টাকা নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।বাংলা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান সহযোগী অধ্যাপক মোঃ আমজাদ হোসেন বলেন, সন্মান দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার ফি সব মিলিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হওয়ায় ফরম পূরণের সময়ে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা সংক্রান্ত ফি গ্রহণ করা হয়। আর পরীক্ষার্থীদের জানানো হয়, প্রবেশপত্র দেওয়ার সময়ে সেমিনার ফি, ইনকোর্স ফিস বাবদ টাকা নেওয়া হবে। কিন্তু ফরম পূরণের পর প্রবেশপত্র দেওয়ার সময়ে কোন পরীক্ষার্থীর কাছে টাকা নেওয়াটা নিয়মের মধ্যে পড়ে কি না এমন প্রশ্নে তিনি কোন সদ্যুত্তর দিতে পারেননি।সংশ্লিষ্ট বিষয়ে অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. নাইদ মোঃ শামসুল হুদার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিকদের কাছে পরীক্ষার্থীদের প্রবেশপত্র বিতরণে কোন টাকা নেওয়া হচ্ছে দাবী করলেও পরে তিনি টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে। তবে কেন কি জন্য এই টাকা নেওয়া হচ্ছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি সন্তোষজনক জবাব না দিয়েই মুঠোফোন কেটে দেন।

এ ব্যাপারে কলেজ ছাত্রলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ আলী সোহেল বলেন, শিক্ষার্থীরা এমন অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে অধ্যক্ষ স্যারের সাথে কথা বলেছি। স্যার বলেছেন, তোমাদের নেতাদের সাথে আলাপ আলোচনা করেই এই টাকা নেওয়া হচ্ছে। সোহেল বলেন, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হিসেবে কয়েকদিন আগে দায়িত্ব পেয়েছি। আমার পূর্ববর্তী সভাপতি ও অন্যান্যরা কি আলাপ আলোচনা করেছেন, সে বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা।এ ব্যাপারে কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লা আল মামুনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।এদিকে একাধিক শিক্ষার্থীরা বলেন, সন্মান দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষার্থীরা ফরম পূরণের বর্ধিত ফি প্রত্যাহারের দাবীতে সম্প্রতি কলেজের সন্মুখে পাবনা-ঈশ্বরদী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ প্রদর্শণ, মানববন্ধন ও ২ ঘন্টা সড়ক অবরোধ করে রাখে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে অধ্যক্ষ প্রফেসর ড. নাইদ মোঃ শামসুল হুদা উপস্থিত হয়ে ফরম পূরণের ফি হ্রাস করার আশ্বাস দিলে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা তাদের কর্মসূচী স্থগিত করেন।

বাংলা, দর্শণ, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস, ইংরেজিসহ বেশ কয়েকটি বিভাগের শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আন্দোলনের সময়ে অধ্যক্ষ স্যার ফি কমানোর আশ্বাস দিলেও পরবর্তীতে বিভিন্ন ভাবে শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে অর্থ আদায়ে মেতে উঠেছেন। তারা বলেন, অধ্যক্ষসহ বিভিন্ন বিভাগীয় প্রধান, শিক্ষক এবং ছাত্র নেতারা জোটবদ্ধ হয়ে এই ঘটনার সাথে জড়িয়ে পড়েছেন। তারা মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আমাদের সাথে প্রতারণাও করেছেন।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দর্শনের এক শিক্ষার্থী বলেন, তিন দফায় বিভাগ টাকা আদায় করছেন। তিনি বলেন, প্রথম অবস্থায় ১৯৫০ টাকা দিয়েছি। পরবর্তীতে আরও ২৩৩০ টাকা দিয়েছি। এখন প্রবেশ পত্র নেওয়ার সময়ে ১৪০০ টাকা দাবী করা হয়েছে।

বাংলার পরীক্ষার্থী পাপিয়া খাতুন বলেন, বিভাগ থেকে ফরম পূরণের সময়ে ৬০০০ টাকা দাবী করা হয়েছিল। পরীক্ষার্থীরা ফি কমানোর জন্যে আন্দোলন শুরু করলে অধ্যক্ষ স্যার ১৫০০ টাকা কমিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ৬০০০ টাকা জমা দেওয়া হলেও বিভাগ থেকে তাকে ১৫০০ টাকা ফেরৎ দেওয়া হয়। কিন্তু প্রবেশ পত্র নেওয়ার সময়ে তাকে নতুন করে ১৫৬০ টাকা জমা দিতে হয়েছে। পাপিয়া বলেন, কলেজ কর্তৃপক্ষ আমাদের সাথে ভিন্নমাত্রার প্রতারণা করেছেন। প্রবেশ পত্র দেওয়ার সময়ে এই প্রথম দেখছি টাকা নেয়া হচ্ছে।সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিমত, উত্তরবঙ্গের ঐতিহ্যবাহি এই বিদ্যাপীঠে দিনদিন এর ঐতিহ্য আর সুনাম ক্ষুন্ন হচ্ছে বিভিন্ন কারণে। এর সাথে জড়িয়ে পড়েছেন, অধ্যক্ষ, শিক্ষক, ক্ষমতাশীন দলের ছাত্রনেতাসহ একটি স্বার্থন্বেষী মহল। সাধারণ এই শিক্ষার্থীদের দাবী, দূর্নীতি মুক্ত একটি শিক্ষাঙ্গনসহ কলেজের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামণা করেন।