শ্রদ্ধা আর ভালবাসায় চিরনিন্দ্রায় শায়িত হলেন ফিরোজা বেগম

দৈনিকবার্তা-ঢাকা-১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ : তবু আমারে দেব না ভুলিতে গানের পাখি ফিরোজা বেগমের গলায় এই সুর যেন বাজছে৷আর তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বনানী কবরস্থানের দিকে৷ হাসপাতালের হিমঘর থেকে ইন্দিরা রোডের বাসা, সেখান থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার, এরপর গুলশান আজাদ মসজিদে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে চিরনিন্দ্রায় শায়িত হলেন তিনিকিংবদন্তি নজরুলসংগীত শিল্পী ফিরোজা বেগমের দাফন সম্পন্ন হয়েছে৷ বুধবার বাদ আসর গুলশানের আজাদ মসজিদে জানাজা শেষে বনানী কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়৷

এর আগে মঙ্গলবার দিনগত রাত সাড়ে ৮টায় রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি৷ মৃতু্যর সময় তার বয়স হয়েছিলো ৮৪ বছর৷দাফনের সময় ফিরোজা বেগমের দুই ছেলে হামিন এবং শাফিনসহ নিকটাত্মীয়রা কবরস্থানে উপস্থিত ছিলেন৷ তবে শিল্পীর বড় ছেলে তাহসিন আহমেদ দেশের বাইরে অবস্থান করায় তাকে ছাড়াই দাফন করা হয়েছে৷

এরআগে জানাজা শেষে মেঝ ছেলে হামিন জানান, তাহসিন আহমেদ দেশের বাইরে আছেন৷ তার আসতে আরো কিছুটা সময় লাগবে৷ কিন্তু আমরা ততক্ষণ অপেক্ষা করবো না৷ যদিও মায়ের মৃতু্য খবর শোনার পরপরই তিনি রওনা হয়েছেন৷

এর আগে বুধবার দুপুর ২টা থেকে সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য ফিরোজা বেগমের মরদেহ শহীদ মিনারে রাখা হয়৷ কিংবদন্তি এ শিল্পীকে শ্রদ্ধা জানাতে শহীদ মিনার প্রাঙ্গণে মানুষের ঢল নামে৷ রাজনীতিবিদ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারি সংগঠন, সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কলাকুশলিসহ সর্বস্তরের জনগণ তাকে শেষ শ্রদ্ধা জানান৷দুপুর দেড়টার দিকে শিল্পীর মরদেহ ইন্দিরা রোডের বাসভবন শহীদ মিনারে আনা হয়৷ এসময় লাশবাহী গাড়ির সঙ্গে সঙ্গে মেঝ ছেলে হামিন আহমেদ এবং ছোট ছেলে শাফিন আহমেদসহ নিকটাত্মীয়রাও সেখানে আসেন৷

শ্রদ্ধা নিবেদনের আগে হামিন আহমেদ ও শাফিন আহমেদ বলেন, নজরুলসংগীত বিশ্বের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমাদের মা যেমন সংগ্রাম করেছেন , কেউ এমন সংগ্রাম করেননি৷ তিনি সারাটা জীবন আপনাদের দিয়েই গেছেন, আপনারা সবাই আমাদের আম্মার আত্মার শান্তির জন্য দোয়া করবেন৷

মঙ্গলবার দিনগত রাত সাড়ে ৮টায় রাজধানীর অ্যাপোলো হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ফিরোজা বেগম৷ ডায়ালিসিসের পর জ্ঞান না ফেরায় ফিরোজা বেগমকে কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাস দিয়ে রাখা হয়েছিল৷ কিন্তু তার স্নায়ু কাজ না করায় পরে তা খুলে নিয়ে তাকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিত্‍সকরা৷

বেলা দুইটা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তাঁর মরদেহ রাখা হয় সর্বসাধারণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে মরহুমার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়৷ বিকেল চারটার দিকে সেখানে এক মিনিট নীরবতা পালনের মাধ্যমে শেষ হয় শ্রদ্ধা নিবেদনের পর্ব৷ এরপর গুলশানের আজাদ মসজিদে বাদ আসর অনুষ্ঠিত হয় জানাজা৷এর আগে সকাল আটটয় হাসপাতালের হিমঘর থেকে ফিরোজা বেগমের মরদেহ ইন্দিরা রোডের বাসভবনে নেওয়া হয়৷ সেখানে গণমাধ্যমের অসংখ্য কর্মীসহ মরহুমার ভক্ত ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা ভিড় করেন৷

দীর্ঘ সাত দশক নজরুলের সুর আর বাণীতে বাংলা গানের শ্রোতাদের মুগ্ধ করে চিরবিদায় নেয়া কিংবদন্তি শিল্পী ফিরোজা বেগমের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাল সর্বস্তরের মানুষ৷বুধবার বেলা দেড়টার দিকে শিল্পীর মরদেহ তার ইন্দিরা রোডের বাসা থেকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নিয়ে আসা হয়৷ তার আগেই সংগীত ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কর্মীরা এবং বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ ফুল হাতে শহীদ মিনার চত্বেরে জড়ো হতে থাকেন৷ শিল্পীর ছেলে ব্যান্ডশিল্পী হামিন আহমেদ ও শাফিন আহমেদ এবং স্বজনরাও শহীদ মিনারে উপস্থিত ছিলেন৷

মায়ের আত্মার শান্তির জন্য উপস্থিত সবার কাছে দোয়া চান হামিন৷ তিনি বলেন, নজরুলসংগীতকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে সারা জীবন সংগ্রাম করে গেছেন তার মা৷

ফিরোজা বেগমের বড় ছেলে তাহসিন আহমেদ মায়ের মৃতু্যর খবরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে রওনা হয়েছেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন৷সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে এই শ্রদ্ধা নিবেদন পর্ব শেষে ফিরোজা বেগমের মরদেহ জানাজার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় গুলশানের আজাদ মসজিদে৷ তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে বলে জানিয়েছেন হামিন৷

ঢাকার অ্যাপোলো হাসপাতালে চিকিত্‍সাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে মৃতু্য হয় ৮৪ বছর বয়সী এই শিল্পীর৷

রাতে হাসপাতালের হিমঘরে রাখার পর বুধবার সকাল ৮টার দিকে তার কফিন নিয়ে আসা হয় ইন্দিরা রোডের বাসায়৷ এ সময় সেখানে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়৷১৯৩০ সালের ২৮ জুলাই গোপালগঞ্জ জেলার রাতইল ঘোনাপাড গ্রামের জমিদার পরিবারে ফিরোজা বেগমের জন্ম৷ বাবা খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসমাইল ছিলেন আইনজীবী৷ মা কওকাবন্নেসা বেগমও ছিলেন সংগীতের অনুরাগী৷

ফিরোজা যখন গানের জগতে প্রবেশ করেন তখনকার বাঙালি মুসলমান সমাজে মেয়েদের সংগীতের তালিম নেয়া সহজ বিষয় ছিল না৷ কিন্তু বয়স দশ বছর পেরুনোর আগেই তার কন্ঠে নিজের গান শুনে মুগ্ধ হন খোদ কবি নজরুল ইসলাম৷