10-09-14-PM-4

দৈনিকবার্তা-ঢাকা-১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৪ : বাংলাদেশের বিকাশমান সমপ্রচার মাধ্যমকে একটি সুনির্দিষ্ট নিয়ম-নীতির মধ্যে পরিচালনা এবং মানোন্নয়নে জাতীয় সমপ্রচার নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ সমপ্রচার নীতিমালার আলোকে সমপ্রচার কমিশন গঠন করা হবে বলেও জানান তিনি৷সমালোচনা থাকতে পারে তবে সুষ্ঠুভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য নীতিমালা প্রয়োজন সেজন্যই জাতীয় সমপ্রচার নীতিমালা করা হচ্ছে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷

বুধবার রাজধানীতে জাতীয় গণমাধ্যম ইন্সটিটিউটে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন প্রশিক্ষণ কোর্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন৷জনগণের অধিকার সংরক্ষণ করতেই এ নীতিমালা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমনভাবে এটি করা হবে যেন ভবিষ্যতে কেউ তা বন্ধ করতে না পারে৷

শেখ হাসিনা আরো বলেন, অনেকেই জাতীয় সমপ্রচার নীতিমালার সমালোচনা করছেন৷ জনগণের অধিকার রক্ষায় এ নীতিমালা জরুরি৷তিনি বলেন, এখন এটা নিয়ে বেশ তোলপার চলছে, অনেকে এটার বিরোধীতা করে যাচ্ছে৷ তবে বিশ্বের প্রত্যেকটা দেশেই একটি সমপ্রচার নীতিমালা তৈরি করা হয় এবং গ্রহণ করা হয়, বাস্তবায়ন করা হয় এর মাধ্যমেই সবকিছু চলে৷ আমাদের সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন একটা দাবিও ছিলো সমপ্রচার নীতিমালার৷

এ সময় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বিকাশের ক্ষেত্রেও সরকার গুরুত্ব দিচ্ছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী৷আন্তর্জাতিক মানের চলচ্চিত্র তৈরির জন্য নির্মাতাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশে সমপ্রচার মাধ্যমকে সুনির্দিষ্ট নিয়মনীতি অনুযায়ী পরিচালনা ও মান উন্নয়নের জন্য আমরা জাতীয় সমপ্রচার নীতিমালা ২০১৪ প্রণয়ন করেছি৷ সমপ্রচার নীতিমালার আলোকে সমপ্রচার কমিটিও গঠন করা হবে৷

এদিকে, বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের (বিএফটিআই) অধীনে প্রথমবারের মতো চালু হলো এক বছর মেয়াদী চলচ্চিত্র নির্মাণ প্রশিক্ষণ ডিপ্লোমা কোর্স৷ প্রথম ব্যাচে ৩০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে শুরু হলো এর পথচলা৷বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট এবং এর প্রথম কোর্সের উদ্বোধন উপলক্ষে তথ্য মন্ত্রণালয় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে৷ শেখ হাসিনা বলেন, সব কিছুরই নীতিমালা দরকার৷ সবাইকে সমাজের কাছে দায়বদ্ধ থাকতে হবে৷অধিকার যেমন ভোগ করবেন,অন্যের অধিকারও সংরক্ষণ করতে হবে৷সমপ্রতি সমপ্রচার নীতিমালার অনুমোদন করে গেজেট প্রকাশ করে সরকার৷ তবে এ নীতিমালার বিরোধিতা করেছে সম্পাদক পরিষদসহ সাংবাদিকদের কয়েকটি সংগঠন৷

চলচ্চিত্র শিল্পের উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন, এফডিসিকে আমরা ডিজিটাল করার উদ্যোগ নিয়েছি৷আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে যন্ত্রপাতি আসবে৷ এছাড়া সিনেমা হলগুলোর আধুনিকায়ন হবে৷ সেজন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি৷

চলচ্চিত্র শিল্প বিকাশের জন্য সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানানোর পাশাপাশি টেলিভিশন ও দেশের সব প্রচার মাধ্যমের দ্রুত বিকাশের লক্ষ্যে সুষ্ঠু পরিকল্পনানেয়ার কথাওশেখ হাসিনা বলেন৷সরকারপ্রধান বলেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্প যেন বিশ্বের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে পারে; সে মান রক্ষার লক্ষ্যেই চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট গড়ে তোলা হয়েছে৷

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের (বিএফটিআই) কার্যক্রম শুরুর ঘটনাকে একটি মাইলফলক হিসাবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী৷ তিনি বলেন, দেশের কৃষ্টি, সংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে এ দুটি গণমাধ্যমের তাত্‍পর্যপূর্ণ অবদান রয়েছে৷ এই মাধ্যমগুলো সমাজ সংস্কার করে৷ কূপমুণ্ডকতা থেকে বের হতে সহায়তা করে৷ কোনো ভুল হলে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়৷

আমরা রাজনীতিবিদ৷ আমরা বক্তৃতা দেই৷ কিন্তু যে কোনো বক্তব্য চলচিত্র ও টেলিভিশনের মাধ্যমে দ্রুত ছড়ায়৷ তাই যুগ যুগ ধরে চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন মাধ্যম শিক্ষাবিস্তার, জাতিগঠন ও সুন্দর সমাজ বিনির্মাণে নিয়ামক ভূমিকা পালন করে আসছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী৷গণমাধ্যমের উন্নয়নে ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল তত্‍কালীণ প্রাদেশিক আইন পরিষদে পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা বিল উত্থাপন, চলচ্চিত্র উন্নয়ন সংস্থা (এফডিসি) সৃষ্টি, সাংবাদিকতার বিকাশ ও সুষ্ঠু প্রশিক্ষণের লক্ষ্যে ১৯৭৪ সালে জাতীয় প্রেস ইনস্টিটিউট প্রকল্প অনুমোদনসহ গণমাধ্যমের উন্নয়নে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তার কন্যা শেখ হাসিনা৷

সরকারের অনুমোদন দেয়া সব টেলিভিশন চ্যানেল কাজ শুরু করলে দেশে মোট চ্যানেলের সংখ্যা ৪১টি হবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী হাসতে হাসেত বলেন, আমরাই অনুমতি দিলাম৷ আর সুযোগ পেলেই এই টেলিভিশন আমাদের বিরুদ্ধে যা খুশি বলে যায়৷সিনেমাকে বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম হিসাবে উল্লেখ করে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রেক্ষাগৃহগুলোর আধুনিকায়নে গুরুত্ব দেন তিনি৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকার বাইরে সিনেপ্লেঙ্ নির্মাণের ক্ষেত্রে আরো বেশি কর অব্যাহতি দেয়া হবে৷

চলচ্চিত্রের উন্নয়নে এফডিসির বিদ্যমান যন্ত্রপাতির সংস্কার, উন্নয়ন ও সমপ্রসারণ, আধুনিক যন্ত্রপাতি সংযোজন, চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য কারিগরি সুবিধা এবং ডিজিটাল প্রদর্শন ব্যবস্থা গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধে ক্যামেরাসহ নতুন যন্ত্রপাতি চলে আসবে৷ শেখ হাসিনা জানান, কাজের ব্যস্ততায় দেশীয় চলচ্চিত্র দেখার সময় তার সবসময় হয় না৷ তবে ভ্রমণের সময়ে বিমানে তিনি দেশের ছবিই দেখেন৷আমি মুগ্ধ হয়ে যাই- আমাদের চলচ্চিত্রের এতো সুন্দর মান৷

অনুষ্ঠানে অতিথিদের মধ্যে প্রথম সারিতে ছিলেন মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সাংসদ সুকুমার রঞ্জন ঘোষ, যিনি একজন প্রযোজকও৷তার দিকে তাকিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, অনেক প্রযোজক এখন এমপি হয়ে হাত গুটিয়ে বসে আছে৷এতো টাকা কামিয়ে করবেন কি? খরচ করেন৷শিক্ষনীয় এবং পরিবারের সবাইকে নিয়ে দেখার মতো চলচ্চিত্র নির্মাণের ওপরও গুরুত্ব দেন প্রধানমন্ত্রী৷

আমার প্রত্যাশা সৃজনশীল, মেধাবী, দেশপ্রেমিক ও মানবিক মূল্যবোধে উদ্দীপ্ত জনগোষ্ঠী গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউট একটি সহায়ক প্রতিষ্ঠান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে… দেশে সুস্থধারার চলচ্চিত্র নির্মাণকে উত্‍সাহিত করবে, বিশ্বের বুকে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন মাধ্যমকে সুপ্রতিষ্ঠিত করবে৷তথ্য সচিব মর্তুজা আহমদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু৷বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন৷