2দৈনিক বার্তা : র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ান (র‌্যাব) তার নিজস্ব গতিতেই চলবে। এ এলিট ফোর্সটিকে বিলুপ্ত করার কোনো প্রশ্নই আসে না।তবে র‌্যাবের  ভেতরে যেসব অসাধু ব্যক্তি অপরাধের সঙ্গে জড়িয়ে পড়বে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা  নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান।সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বুধবার দুপুর  পৌনে তিনটার দিকে এসব কথা বলেন।

নারায়ণগঞ্জের ৭ হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত চলছে। র‌্যাব বা পুলিশ  যেই জড়িত থাকুক না  কেন তাদের প্রচলিত আইনের আওতায় এনে বিচার করা হবে।কোনও ছাড়  দেওয়া হবে না। র‌্যাবের তিনজন অফিসারকে ইতোমধ্যেই  ক্লোজড করা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠালগ্ন  থেকে র‌্যাবের কর্মকাণ্ড সমালোচনা করে এলিট এ  ফোর্সটি বিলুপ্ত করার জন্যে মানবাধিকার সংগঠনগুলো দাবি জানিয়ে আসছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,  কোনো প্রশ্নই আসে না র‌্যাব বিলুপ্ত করার। কিছু অসাধু কর্মকর্তার জন্য দুই/একটা সমালোচনার সম্মুখীন হলেও এর জন্যে পুরো বাহিনী দায়ী নয়।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাইকোর্টের নির্দেশে নারায়ণগঞ্জের ৭ হত্যাকাণ্ড তদন্তের কমিটি গঠনের কাগজপত্র এখনো স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ে আসেনি। কাগজপত্র আসা মাত্র আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ডের জন্য র‌্যাব বিলুপ্ত করার বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, দুই-একজন কর্মকর্তার দোষের কারণে  কোনো প্রতিষ্ঠান বন্ধের প্রশ্ন আসে না।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী জানান,নারায়নগঞ্জের গুম-হত্যার ঘটনায় দায়িত্ব অবহেলায় সংশ্লিষ্ট কর্র্মকতা ও সন্দেহভাজনদের তালিকা  তৈরি করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।তিনি বলেন, এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত র‌্যাব কর্মতাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।তদন্তে  দোষী প্রমাণিত হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।  দেশের প্রচলিত আইনে তাদের বিচার হবে।

কামাল বলেন, ঘটনার সময় দায়িত্বে থাকা নারায়ণগঞ্জ জেলায় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারকে প্রত্যাহার করে ঢাকায় আনা হলেও তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তদন্তে তাদের অবহেলা পাওয়া গেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।প্রতিমন্ত্রী বলেন, অভিযুক্ত আসামিরা যাতে দেশত্যাগ করতে না পারে সে জন্য সারাদেশের বিমানবন্দরগুলো ও বর্ডার এলাকায় সর্তকতামূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের গুম ও হত্যার ঘটনাটি অধিতর গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত চলছে। আশা করি দ্রুত এর তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে।

এ ঘটনার সঙ্গে একজন মন্ত্রীপুত্রের নাম এসেছে, তার বিষয়ে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে-এমন প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া যাবে তাদের  প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।  নারয়ণগঞ্জে ৭ জনকে অপহরণ ও হত্যার ঘটনায় অভিযোগের তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।  যেকোনো সময় অভিযুক্তদের তালিকা প্রকাশ করা হবে। আর তালিকা অনুযায়ী অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা  নেওয়া হবে।

সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন,  র‌্যাবের আরো  কেউ যদি জড়িত থাকেন, তাহলে তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, সরকার এ বিষয়ে কঠোর। অভিযোগের তদন্ত চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। যেকোনো সময় অভিযুক্তদের তালিকা প্রকাশ করা হবে।

এ ঘটনায় র‌্যাবের সুনাম ক্ষুন্ন হওয়ার বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের একটি ঘটনায় র‌্যাবের সফলতার ওপর  কোনো প্রভাব পড়বে না।দুপুরে দ্বিতীয় দফায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, দায়িত্ব অবহেলাকারীদের বিরুদ্ধে তালিকা  তৈরি করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় জড়িত মূল আসামিদের সহযোগী এবং ন্যূনতম সংশ্লিষ্টদেরও তালিকা হচ্ছে। তালিকা ধরে প্রত্যেকর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দোষীদের প্রত্যেককেই ধরা হবে।তদন্ত চলছে, এজাহারে যাদের নাম রয়েছে তাদের  গ্রেফতারের জন্যও সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

র‌্যাব কর্মকর্তাদের অবসরে পাঠানো, শাস্তি এবং পুলিশ সুপার ও জেলা প্রশাসককে  প্রাইজ  পোস্টিং কিনা জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কর্তব্য অবহেলার কারণে পুলিশ সুপার ও  জেলা প্রশাসককে সরানো হয়েছে। সেনা আইনে দায়িত্বে অবহেলার কারণে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়ে থাকতে পারে।

নারায়ণগঞ্জের অপহরণের পরেও আরো অপহরণ করা হয়েছে,  সে বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ কী জানতে চাইলে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা এর মধ্যে অপহৃত হয়েছেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী তাদেরও খুঁজে  বের করবে।কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে টাকার বিনিময়ে হত্যার ঘটনায় অভিযোগের মুখে থাকা নারায়ণগঞ্জে র‌্যাব-১১ এ থাকা তিন কর্মকর্তা চাকরি হারিয়েছেন।

গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) প্যানেল  মেয়র ও ২নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম ও আইনজীবী চন্দন সরকারসহ পৃথকভাবে সাতজনকে প্রকাশ্য দিনে-দুপুরে অপহরণ করে দুবৃর্ত্তরা।ওইদিন সন্ধ্যায় অপহৃত নজরুল ইসলামের গাড়ি গাজীপুর  থেকে উদ্ধার করা হয়। এরপর রাজধানীর গুলশানের নিকেতন থেকে অ্যাডভোকেট চন্দন সরকারের গাড়ি উদ্ধার করে পুলিশ।

৩০ এপ্রিল দুপুরের পর থেকে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে অপহৃত ছয়জন এবং ১ মে সকালে বাকি একজনের মরদেহ একই নদী  থেকে উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় মহাসড়ক অবরোধ ও ৪৮ ঘণ্টার কর্মবিরতিসহ রোববার নারায়ণগঞ্জে হরতাল পালন করে  জেলা আইনজীবী সমিতি।অপহরণ ও হত্যার জন্য স্থানীয় র‌্যাব-১১- কে দায়ী করেন নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলামের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম ওরফে শহীদ  চেয়ারম্যান।

তিনি অভিযোগ করেন, ছয়  কোটি টাকার বিনিময়ে সাতজনকে অপহরণ করে হত্যা করা হয়েছে। প্রধান আসামি কাউন্সিলর নূর হোসেন র‌্যাব ১১  কে ওই টাকা দিয়ে অপহরণ ও খুন করান বলে অভিযোগ করেন তিনি।তার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে একটি তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। মঙ্গলবার অভিযুক্ত তিন র‌্যাব সদস্যকে চাকরিচ্যুত করা হয়।এ ঘটনায় এ পর্যন্ত  মোট ১৬ জনকে  গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

এদের মধ্যে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাতা  লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদও রয়েছেন।

তারেক সাঈদ র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক ছিলেন। সাতজনকে অপহরণের পর তাকে নারায়ণগঞ্জ  থেকে সরিয়ে এনে ওই দিনই সেনাবাহিনীতে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।চাকরিচ্যুত অন্য দুজন হলেন-  সেনাবাহিনীর  মেজর আরিফ হোসেন এবং নৌবাহিনীর  লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এমএম রানা। এই দুজনও নারায়ণগঞ্জে র‌্যাব-১১ এ কর্মরত ছিলেন।

হত্যাকাণ্ডে র‌্যাবের  কেউ জড়িত থাকলেও ছাড় না দেয়া হবে না বলে মন্ত্রীদের বক্তব্যের মধ্যে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) বুধবার তিনজনকে অবসরে পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।আইএসপিআরের সহকারী পরিচালক (সেনা) রেজাউল করিম বলেন, সকালে সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্ট বিভাগ  থেকে তারেক এবং আরিফের অকালীন অবসরের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।তবে দুপুর পর্যন্ত আইএসপিআর  কোনো প্রজ্ঞাপন পায়নি বলে জানান তিনি।

এমএম রানাকে বাধ্যতামূলক অবসর দেয়ার বিষয়টি নৌবাহিনী বাহিনী  মৌখিকভাবে নিশ্চিত করলেও প্রজ্ঞাপন  দেয়া হয়নি বলে জানান আইএসপিআরের সহকারী পরিচালক ( নৌ) তাপসী রাবেয়া  লোপা।

গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নজরুল, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকারসহ সাতজনকে র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণ করা হয় বলে অপহৃতদের পরিবার অভিযোগ তোলে।

সেদিন র‌্যাব-১১ এর তৎকালীন অধিনায়ক তারেক সাঈদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, তারা কাউকে আটক করেননি এবং এই ঘটনার সঙ্গে তার বাহিনীর কোনো সংশ্লিষ্টতাও নেই।অপহরণের চাঞ্চল্যকর এই ঘটনার দুদিন পর নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার, দুটি থানার ওসির পাশাপাশি র‌্যাবের এই কর্মকর্তাদেরও প্রত্যাহার করা হয়।র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক জিয়াউল আহসান সেদিনই বলেছিলেন যে লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদকে  সেনাবাহিনীতে  ফেরত পাঠানো হয়েছে।

এর পরের দিনই শীতলক্ষ্যা নদীতে অপহৃতদের লাশ  ভেসে ওঠে, যাদের অপহরণের পরপরই হত্যা করা হয়েছিল বলে ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।

নিহত নজরুলের শ্বশুর শহীদুল ইসলাম এরপর অভিযোগ তোলেন, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নূর হোসেন র‌্যাবকে ৬  কোটি টাকা দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

শহীদুল নাম উল্লেখ না করে চাঁদপুরের সংসদ সদস্য এবং মন্ত্রিসভার এক সদস্যের স্বজন এক র‌্যাব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। ওই মন্ত্রীর এক ছেলে এই অর্থের লেনদেনে ছিল বলে তার অভিযোগ।গুরুতর এই অভিযোগ ওঠার পর র‌্যাব নিজ বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর তদন্ত করতে হাই কোর্টও সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে।স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, তদেন্ত যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবে, তাদের ছাড়  দেয়া হবে না। র‌্যাবের মহাপরিচালক  মোখলেছুর রহমান মঙ্গলবার সংসদীয় কমিটিকে আশ্বস্ত করেছেন, দোষী সদস্যদের রক্ষার  কোনো  চেষ্টা র‌্যাব করবে না।